সম্পাদকীয়

বায়ুদুষণে ধুঁকছে রাজধানী সতর্ক হোন

বায়ুদূষণে ধুঁকছে রাজধানী ঢাকা। ধুলাবালি, যানবাহন আর কলকারখানার ধোঁয়ায় বছরের বড় অংশ জুড়ে ঢাকার বায়ুমান থাকে তলানিতে। সারা বছর চলা নির্মাণকাজ, সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি আর আবর্জনা পোড়ানোয় দূষিত হয় বাতাস। মাস্ক ব্যবহার করেও দূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ। ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর চিত্রও প্রায় একই। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা এলাকাগুলোতে বায়ুর মান বেশি খারাপ। গাজীপুর, নারায়াণগঞ্জের মতো এলাকাগুলোতেও বায়ু মান থাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায়। বিশ^ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তারা বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন। ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ও ¯œায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে। রাসায়নিক মিশ্রণ আছে, এমন দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। একই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন- ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমাসহ নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া গর্ভবতীদের শারীরিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হলো বায়ুদূষণ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মত, বায়ুদূষণে পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে এমনকি শুক্রাণুর মানও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নারীদের ডিম্বাণু কল্পনাতীতভাবে কমে গেছে। আবার যে-সব ডিম্বাণু আছে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ হচ্ছে বায়ুদূষণের জন্য। বায়ুদূষণ আমাদের স্মায়ূতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং এর প্রভাবে মেজাজ খিটখিটে থাকে। যে কোনো কাজে সঠিকভাবে মনোযোগ দেয়া যায় না। ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়, হার্টের উপরে চাপ পড়ে। এছাড়া দূষিত বায়ু থেকে বিভিন্ন ধরনের ভারি সিসা বা ভারি ধাতব পদার্থ এটি আমাদের শরীরের ভিতরে শোষিত হয়ে যায় বা ফুসফুসের মধ্য দিয়ে। তাছাড়া লিভার, কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গর্ভস্থ শিশুর ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত ও অসময়ে গর্ভপাতও হয় দূষিত বায়ুর কারণে। গর্ভকালীন সময়ে ২ দশমিক ৫ পিএম প্রতি ১০ মাইক্রোমিটার এক্সপোজার বেশি হওয়ার কারণে প্রায় ১৫ শতাংশ অটিজমের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে গর্ভবতীদের বাইরে বের হওয়া থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। একান্তই বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। এছাড়া, বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে সবুজ পরিবেশে থাকার চেষ্টা করতে হবে। বায়ুদূষণ কমাতে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানতে হবে। জলবায়ু পরির্বতন ও বায়ুদূষণ রোধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ঘর থেকে বের হলে অধিক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button