খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটার মহোৎসব: পরিবেশের সংকট ও প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে, যা পরিবেশের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়টি উপজেলায় প্রকাশ্যে এবং রাতের আঁধারে নির্বিচারে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি পৌর এলাকা, সদর উপজেলা, শালবন, কুমিরা টিলা, সবুজবাগ, পেরাছড়া, গোলাবাড়ী, বুয়াছড়িÑএসব এলাকায় এক শ্রেণির দখলবাজ নানা কৌশলে পাহাড়ের জমি শ্রেণি পরিবর্তন করে বিক্রি করছে। প্রশাসনের নজরদারি থাকলেও এই ধ্বংসযজ্ঞ কোনোভাবেই থামছে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখার ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, খবর পেলেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে দোষীদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদও একই বক্তব্য দিয়েছেন। তবে, অভিযান চললেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিদিনই পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে, প্রশাসনের নজরদারির মধ্যেই এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল অবৈধভাবে পাহাড় কেটে যাচ্ছে। এই পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে খাগড়াছড়ি মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ইতোমধ্যেই ঘন ঘন বন্যা, ভূমিধস, পানিসঙ্কটসহ নানা দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ষাকালে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকেন। প্রতিবছরই পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঘটে। প্রচলিত আইন অমান্য করে অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর খাগড়াছড়ির সহকারী পরিচালক হাসান আহমদ জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরও কাজ করছে। তবে শুধু অভিযান পরিচালনা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। পাহাড় কাটা বন্ধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে, পাহাড় কেটে জমি বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের কঠোর মনোভাব থাকা সত্ত্বেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না, বরং তা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। স্পষ্টতই, শুধুমাত্র অভিযান পরিচালনা নয়, আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড় কাটা কেবল পরিবেশের জন্য হুমকি নয়, বরং সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য ও জনজীবনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। অন্যথায়, পাহাড় ধ্বংসের এই প্রবণতা খাগড়াছড়িকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে, যার খেসারত দিতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।