পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা জরুরি

প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ
এবারের ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৪ মার্চ থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিল। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২০.৮৮ শতাংশ, আহত ৪০.৪১ শতাংশ কমেছে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে শতকরা হিসেবে কমলেও মোট হতাহতের সংখ্যা হিসেবে ৩২২ জন নিহত এবং ৮২৬ জন আহত হওয়া কিন্তু কম নয়। সারা দেশের সড়ককে নিরাপদ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। গত কয়েক দশকে দেশে যোগাযোগব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সড়ক-মহাসড়কগুলো ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে কী করণীয়, তা বহুল আলোচিত। ক্লান্তশ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে সারা দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোও বহুল আলোচিত। দেশে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পথচারী নিহত হন। কাজেই পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত সারা দেশে সড়কজুড়ে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। এ কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা না কমার অন্যতম কারণ হলো পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলা। এ খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও পেশাদারি মনোভাবের অভাব। সড়কে বিদ্যমান ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ে। অথচ এ বিষয়টি আলোচনায় আসে কম। কাজেই দুর্ঘটনা রোধে সড়কে বিদ্যমান ত্রুটি দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নীতিমালা প্রণয়নের কথা শোনা যায়। তবে শুধু নীতিমালা হলেই হবে না, তা বাস্তবায়নেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবহণ চালকদের অনেকেই অদক্ষ, প্রশিক্ষণহীন ও লাইসেন্সবিহীন। বহু যানবাহনের নেই ফিটনেস। অথচ যাত্রী পরিবহণে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তারা। এ প্রতিযোগিতা বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহণকর্মীদের জীবনমানের উন্নয়নেও নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। দুর্নীতি-চাঁদাবাজিসহ পরিবহণ খাতে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।