মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে

বাংলাদেশে অবৈধ মাদক ব্যবসা, বিশেষ করে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের কারবার এক অবর্ণনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাদক পাচারকারীদের সক্রিয়তা, তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব, রাজনৈতিক সুরক্ষা এবং প্রভাবশালীদের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক দেশের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক কারবারিদের দমন ও তাদের শিকড় উপড়ে ফেলার জন্য সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর যুদ্ধ যেন দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ হয়ে আসছে। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) তালিকায় থাকা ৮৩ গডফাদারের মধ্যে মাত্র ১২ জনের গ্রেপ্তারের খবর সামনে এসেছে। এই সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, বিশেষ করে যখন প্রতিদিন মাদক ব্যবসা থেকে অর্জিত বিপুল অঙ্কের অর্থ দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছেÑ কেন এই মাদক চক্রের বড় অংশ এখনও অধরা রয়ে যাচ্ছে? বিশেষত যখন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের অনেকেই ভিন্ন পেশাজীবী হিসেবে পরিচিত এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তখন তাদের গ্রেপ্তার করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ডিএনসি’র তথ্যই জানা গেছে, ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানে ১২ জন গডফাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু বড় অংশ এখনো মুক্ত। এর ফলে মাদক চক্রের ক্রমবর্ধমান দাপট রোধে সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা এবং কক্সবাজারসহ মাদক পাচারের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে প্রভাবশালীদের সঙ্গে মাদক কারবারিদের সম্পর্কের কারণে অভিযানগুলো কার্যকর হতে পারছে না। বিজিবির কক্সবাজার রিজিওনাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল হাসান যদিও সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন, তবুও প্রশ্ন রয়েই যায়Ñ এই নজরদারি কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারছে বাস্তব পরিস্থিতিতে? ঢাকার মোহাম্মদপুর, পল্লবী, মিরপুর এবং গুলশান থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেটÑ দেশের প্রায় প্রতিটি শহরেই মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয়। সুতরাং, শুধু সীমান্তে অভিযান চালানো নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ এলাকার দিকে নজর দেওয়ারও সময় এসেছে।মাদক চক্রকে দমন করতে হলে শুধু অভিযান নয়, তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের উৎসগুলোকেও চিহ্নিত ও বিচ্ছিন্ন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠছে, তা মোকাবেলা করার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাদক সমস্যা শুধুমাত্র একটি আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তারও সমস্যা। দেশের তরুণ সমাজকে মাদকাসক্তির শিকার হতে না দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। তাই, অবিলম্বে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।