সম্পাদকীয়

সাগরপথে মালয়েশিয়া: এক বিভ্রান্তিকর স্বপ্নের পরিণতি

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সাগরপথে যাত্রা করার প্রবণতা আবারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। গত কয়েকদিনে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর অভিযানে যেভাবে শত শত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিককে সাগরে আটক করা হয়েছে, তা কেবল মানব পাচার সমস্যার ভয়াবহ রূপকেই তুলে ধরছে না, বরং আমাদের সমাজে বিদ্যমান হতাশা, দারিদ্র্য এবং দালালচক্রের সক্রিয় অপতৎপরতার প্রতিচ্ছবি হিসেবেও প্রতীয়মান হয়। গত ৮ ও ৯ এপ্রিলের ঘটনায় উদ্ধারকৃত ৪২৩ জন মানুষের মধ্যে ২১৪ জন রোহিঙ্গা এবং ৪২ জন বাংলাদেশিÑএরা সবাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পাড়ি জমাতে গিয়ে জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই যাত্রীদের সঙ্গে ছিলেন ১২ জন দালাল, যারা সরলপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করে জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ পথের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখানে প্রশ্ন উঠেছেÑকেন মানুষ এতটা মরিয়া হয়ে দেশ ছাড়তে চাইছে? কেন তারা আইন, নিরাপত্তা, এমনকি মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে সাগরে নামছে? উত্তরে আমরা দেখতে পাই, একদিকে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনিশ্চিত ও অস্থায়ী জীবন, অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা। এর সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র, যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের প্রশংসনীয় তৎপরতা সাময়িকভাবে এই প্রচেষ্টা ব্যাহত করলেও, সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে অগ্রসর না হলে এই চক্র আবারও মাথাচাড়া দেবে। সীমান্তবর্তী ও উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা, স্থানীয় পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই মানুষগুলো কারো ভাই, কারো সন্তান। তারা উন্নত জীবনের আশায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু মাত্র তাদের আটকানো নয়, বরং তাদের জন্য দেশে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে তারা মরিয়া হয়ে সাগরপথে মৃত্যু বরণ করতে না চায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button