মেহেরপুরে তামাক চাষ, লাভের মোহে ক্ষতির অনিমেষ ছায়া

মেহেরপুরের উর্বর কৃষিজমিতে দিনে দিনে বিস্তার ঘটছে এক বিষবৃক্ষেরÑতামাক। কৃষকরা জানেন, তামাক শরীর ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবুও অধিক মুনাফার আশায় তারা এই চাষে ঝুঁকছেন। দিনকে দিন নতুন নতুন জমি তামাকের আওতায় আসছে। যে জমিতে গত বছরও ছিল সবজির সমারোহ, এবার সেখানে তামাক গাছের কুপ্রভাব বিস্তার করছে। এই প্রবণতা শুধু কৃষকের শরীরের জন্য নয়, সার্বিকভাবে দেশের পরিবেশ, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া কৃষকের ও তার পরিবারের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে রয়েছে ক্যানসার, নিউরো-টক্সিক সমস্যা, শ^াসজনিত রোগ এবং শিশুদের মধ্যে ‘গ্রিন টোবাকো সিনড্রোম’। এই চিত্র নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। আরও উদ্বেগজনক হলো, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদাসীনতা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জেলার তামাক চাষের কোনো তথ্যই তাদের কাছে নেই। অথচ বাস্তবে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকোসহ একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছেÑবীজ, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে তামাক পাতার ক্রয় পর্যন্ত সব দায়িত্ব তারাই নিচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম স্পষ্টতই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের পরিপন্থি। আইন অনুযায়ী, তামাক চাষের আগে সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেইÑএই চিরায়ত সমস্যাই যেন আবারও সামনে এলো। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন জাগে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোথায়? কেন এই চাষের ওপর কোনো তদারকি নেই? কৃষকদের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাক চাষের অনুমতিপত্রের বিষয়টি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কৃষকদের সচেতন করতে হবে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে। পাশাপাশি লাভজনক কিন্তু স্বাস্থ্যবান্ধব বিকল্প ফসলের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা চালু করতে হবে। তামাক শুধু একটি ফসল নয়, এটি একটি ধ্বংসের ছায়া। মেহেরপুর যেন সেই ছায়ায় গ্রাসিত না হয়Ñএই দায় আমাদের সবার।