রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্য সৃষ্টি হওয়া জরুরি

কবে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন? এই প্রশ্নের এখনো স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক বিধিবিধানের মধ্য দিয়ে দেশকে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করানো। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে পছন্দনীয় সরকার গঠন করতে পারবে, এটাই সবার প্রত্যাশা এবং মূল আকাক্সক্ষা। এখানে কোনো ধরনের ছলচাতুরীর সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সুবিধা সংস্কার প্রশ্নে। পরবর্তীকালে তা সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনের মূল উপজীব্য ছিল গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর বাইরে নতুন এবং ছোট দলগুলো মনে করছে, দ্রুত নির্বাচন তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে না। আর বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো মনে করছে, তাদের ক্ষতি এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব করা হচ্ছে। কোনো কোনো মহল থেকে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিতকরণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পাঁচ বছরের ক্ষমতায় রাখা, জাতীয় সরকার গঠন ইত্যাদি যে-সব ইস্যু উত্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো আসলে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা মাত্র। এভাবে কখনোই রাজনৈতিক সংকট সমাধান করা যাবে না। সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এত ছলচাতুরী, কলাকৌশল করার কিছু নেই। এতে বরং সংকট আরো ঘনীভূত হবে। এসব কূটচাল দিয়ে কোনো কাজ হবে না। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ফিরে যাওয়া। এই মুহূর্তে নির্বাচিত সরকার আসা খুবই প্রয়োজন। কারণ একটি নিয়মিত সরকার ছাড়া বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ এসব বিষয় অনেকটাই নির্ভর করছে নির্বাচিত সরকারের ওপর। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিয়মের ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। নির্বাচিত সরকার ছাড়া নিয়মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব হচ্ছে। চাঁদাবাজদের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন নিয়ে জনমনে এক ধরনের সংশয় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতে হবে।