উদ্ধার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করুন

সম্প্রতি সারা দেশে খুন, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। রাত যত গভীর হতে থাকে সড়কের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এসব অপরাধীদের হাতে। বিশেষ করে রাজধানীতে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিনতাই নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পূর্ব শত্রুতা, ব্যক্তিগত বিরোধ ও আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে এখন অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের থানা, ফাঁড়িসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বিপুল অস্ত্র, গুলি লুট করা হয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকেও অস্ত্র-গুলি লুট হয়। এ ছাড়া সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের বাসা থেকেও লাইসেন্স করা অস্ত্র-গুলি লুট হয়। সরকারি বেসরকারি অনেক স্থাপনা থেকে বিভিন্ন ধরনের ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬ লাখ ১৩ হাজার ৯৯ রাউন্ড গুলি লুট হয়। এসব অস্ত্র-গুলির বেশিরভাগই লুট করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও দলীয় ক্যাডাররা। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা যে-সব অস্ত্র-গুলি লুট করে তা কম দামে বিভিন্ন অপরাধী গ্রুপের কাছে বিক্রি করে। এসব অস্ত্র আবার হাতবদল হয়ে চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে। রাজধানীর গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে যে-সব অস্ত্র-গুলি লুট হয়েছে, সেসবের বেশিরভাগই জেনেভা ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা করে। পরে তারা লুট করা অস্ত্র কম দামে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে বিক্রি করে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবার সেই অস্ত্র পুরোনো সহযোগীদের পাশাপাশি নতুন নতুন সন্ত্রাসীর হাতেও তুলে দিয়েছে, যাতে তাদের পুলিশ ও র্যাব চিনতে না পারে। যে-সব অস্ত্র সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, এমনকি খুনোখুনিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কারণে লুটের অস্ত্র এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লুণ্ঠিত অস্ত্র হাতবদল হয়ে সুন্দরবন এলাকার জলদস্যু, তিন পার্বত্য জেলায় তৎপর বিভিন্ন গ্রুপের হাতেও গেছে। এখনও লুণ্ঠিত অস্ত্র অপরাধজগতে বেচাকেনা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অস্ত্রই আবার খুনোখুনি থেকে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বেহাত অস্ত্র র্যাব-পুলিশের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত বছর আগস্টে পটপরিবর্তনের পর অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি নানা কায়দায় জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁদের বাইরে রেখে আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন কোনোভাবেই আশা করা যায় না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা চালাতে হবে।