সম্পাদকীয়

নগরবাসী আর কত দুর্ভোগ পোহাবে

ওয়াসার পানির মধ্যে পোকা, দুর্গন্ধ, ময়লা এবং অন্যান্য দূষিত উপাদান এখন প্রতিদিনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শিশুরা পানির খারাপ গন্ধে পানি খেতে চায় না, এবং ট্যাংক পরিষ্কার করেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান মেলে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না, কীভাবে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করবেন। এটি আর শুধু একটি অসুবিধা নয়Ñএটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি। প্রতিদিন যে শাওয়ার নিচ্ছেন, তা শুধু ক্লান্তি দূর করছে নাÑবরং শরীরে নিয়ে আসছে ব্যাকটেরিয়া, ক্লোরিন ও জীবাণু। এই ক্ষতিকারক উপাদানগুলো ত্বকে র‌্যাশ, চোখে জ্বালাপোড়া, চুল পড়া, এমনকি পেটের অসুখও হতে পারে। জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে মিলছে পোকা। কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগর, খিলগাঁও তিলপাপাড়া, তারাবাগ প্রভৃতি এলাকায় দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় ধরে বাসিন্দারা ব্যবহৃত পানিতে লালচে, কালচে ও সাদা রঙের আধা ইঞ্চি দীর্ঘ বিভিন্ন জাতের পোকা, লার্ভা ও অনুচ্চার্য বস্তুকণা আবিষ্কার করছেন। এসব এলাকার বাসিন্দাদের এ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। একাধিকবার বাসাবাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও মিলছে না সমাধান। ময়লা পানি ব্যবহারের কারণে হরহামেশাই দেখা দিচ্ছে পেটের অসুখ ও চর্মরোগ। আগে ওয়াসার লাইনের পানি ফুটিয়ে পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেত। এখন ট্যাপ ছাড়লেই পানিতে পোকা আসছে। এই পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি এবং যেকোনো সভ্য নগররাষ্ট্রে এটি কল্পনাতীত। যে পানি ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন করভারে জর্জরিত নাগরিকেরা মূল্য পরিশোধ করছেন, সেই পানিই যদি জীবাণুবাহী ও পোকাপূর্ণ হয়, তবে নাগরিক অধিকারের মৌল ভিত্তি কোথায়? এমন পরিস্থিতিতে ওয়াসার দায়সারাভাবে দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা আরও হতাশাব্যঞ্জক ও দায়িত্বহীনতা নির্দেশ করে। প্রতিদিন ব্যবহার করা ওয়াসার পানির মধ্যে থাকা ক্লোরিন, ব্যাকটেরিয়া, ময়লা এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বহন করে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনের জন্য অবিলম্বে সার্বিক তদারকি, গবেষণাভিত্তিক কারণ নিরূপণ ও সমন্বিত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। প্রয়োজনে পানি শোধনাগারসমূহে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা পরিচালনা করা হোক এবং প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জল নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে দায় নির্ধারণ করে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button