সম্পাদকীয়

ফুটপাত থেকে সম্পদের পাহাড়: দায়মুক্তির অবসান চাই

রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবাজার এলাকার ফুটপাত আর মার্কেট ঘিরে গড়ে ওঠা অবৈধ বাণিজ্য নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা হতবাক করার মতো। সাবেক সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন ও ঢাকা ট্রেড সেন্টার (উত্তর) দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক মজুর বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটসমূহে ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ব্যবহার না করে ভুয়া পরিচয়পত্র ও ছবি দিয়ে ৬৭৫টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত দোকান নির্মাণ করে তা বিক্রির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বিপুল অর্থ। একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের প্রত্যক্ষ জড়িত থাকা এই দুর্নীতিকে আরও গভীর করে তোলে। এ অভিযোগ শুধু ফুটপাত দখল বা দোকান বরাদ্দের দুর্নীতি নয়; এটি নগর ব্যবস্থাপনা, সুশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার প্রতিফলন। নগরবাসীর জন্য বরাদ্দকৃত ফুটপাত আজ দখলদারদের আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে, আর প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থা কেবল রাজধানীর সৌন্দর্যহানি ঘটায় না, নগরজীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। সাবেক জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দায় মুক্তির সংস্কৃতি কতটা গভীরে প্রোথিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দৃশ্যমান পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমন সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠতে পেরেছে। দুদকের তলব ইতিবাচক উদ্যোগ হলেও, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, শুধু জিজ্ঞাসাবাদ নয়, প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও কঠোর আইনি পদক্ষেপ। নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে আমরা যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি, তা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসন ও রাজনীতির মধ্যে গড়ে ওঠা এমন দুর্নীতির জাল ছিন্ন করা অপরিহার্য। ফুটপাত, দোকান বা যেকোনো ধরনের জনসম্পদ যেন ব্যক্তিস্বার্থের বলি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছ তদন্ত ও দ্রুত বিচার। আমরা আশা করি, মোজাম্মেল হক মজুসহ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী সাব্যস্ত করা হলে আইনের আওতায় আনা হবে। ফুটপাত ও জনসম্পদ মুক্ত করে নগরবাসীর জন্য একটি সুষ্ঠু, সচল ও বাসযোগ্য রাজধানী গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button