সম্পাদকীয়

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল: ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি ও জনদুর্ভোগের চিত্র

হবিগঞ্জ জেলার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার কেন্দ্রবিন্দু ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল। নামমাত্র এই ‘আধুনিকতা’ বাস্তব চিত্রে এক করুণ ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই নয়। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, ওষুধ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে এই হাসপাতাল যেন রুগ্ন ব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী শুধু সেবা না পেয়ে নয়, অপচিকিৎসা ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে ফিরে যান আশাহত হয়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ৫৭টি পদের বিপরীতে মাত্র ২৭ জনের কর্মরত থাকা এবং তাতেও ছুটি ও অনুপস্থিতির কারণে কার্যত আরও কম চিকিৎসক দিয়ে চলা এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। গাইনি, কার্ডিওলজি, সার্জারি, শিশু-প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেই রয়েছে পদ শূন্যতা। অনুপস্থিত চিকিৎসকের স্থলে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের ঢাকা বা সিলেট গমনই একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে এক মাস ধরে চলছে ওষুধ সংকট-যা দরিদ্র রোগীদের জন্য নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাকে করেছে বিলাসিতা। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের করুণ অবস্থা, মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া, ওয়ার্ডবয়দের হাতে ‘কাটাছেঁড়ার’ কাজ-সবকিছুই স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় একটি জেলা সদর হাসপাতালের কী করুণ পরিণতি হতে পারে রাষ্ট্রীয় নজরদারির অভাবে। চিকিৎসক সংকট, ওষুধ সংকট, শয্যার স্বল্পতা, এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা শুধু একটি জেলার নয়, পুরো দেশের স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থার প্রতিচ্ছবি। একদিকে স্বাস্থ্য খাতে বিপুল বাজেট বরাদ্দ, অন্যদিকে বাস্তব চিত্রে এমন দুরবস্থা-একে ক্ষমা করা যায় না। স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার। এই অবস্থায় সরকারকে অবিলম্বে চিকিৎসক নিয়োগ, শূন্যপদ পূরণ এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আশ^াস নয়, চাই দৃশ্যমান ব্যবস্থা। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে না পারা মানে জেলার লাখো মানুষের জীবন নিয়ে অবহেলা করা। এই অবহেলা বন্ধ হওয়া জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button