প্রাণহানি ঠেকাতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে

রুদ্র-রুষ্ট বিরূপ প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধি, উঁচু বৃক্ষ নিধন, কথিত সীমানা পিলার চুরি হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে বাড়ছে বজ্রপাতের সংখ্যা; বাড়ছে মৃত্যু। বিশেষ করে, গ্রামাঞ্চলে বজ্রপাত এখন ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। বজ্রপাতে একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বজ্রপাত নিয়ে দেশে তেমন গবেষণা নেই। বজ্রপাত নিরোধে উদ্যোগও ধীরগতিতে চলছে। বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক কথিত সীমানা পিলার একে এক উধাও হলেও রাষ্ট্র সরব নয়। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এতে সারা বিশ্বে বছরে ২৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতে বাংলাদেশে ঠিক কতো মানুষের মৃত্যু হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগৃহীত তথ্য থেকে ধারণা করা যায় এই সংখ্যা দেড়শ থেকে দুশোর মতো। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুন মাসে। এপ্রিল থেকে মে-জুন পর্যন্ত বজ্রপাতের মৌসুম। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। একজনের মৃত্যুর সঙ্গে অন্তত ১০ জন আহত হয়ে থাকে বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বজ্রপাতে আহতরা স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। বজ্রপাতে প্রতিবছর দেশে ৩০০ জনের বেশি মারা যান। দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে; বাড়ছে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার পরিধিও। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে হিমালয়-এ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সারা দেশে এ সময় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ব্যস্ততা অনেকদিন চলমান থাকবে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, বৈশাখ মাসে বজ্রপাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মানুষ মাঠেঘাটে হরহামেশাই বজ্রপাতে প্রাণ হারান। কাজেই এ সময় কীভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা মিলবে, তা মানুষকে জানাতে হবে। কাজেই এ থেকে সুরক্ষায় খোলা মাঠে বজ্রনিরোধক দ- বসাতে হবে আরও বেশি। মসজিদ বা মন্দিরকেন্দ্রিক আর্থিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে বেশি বেশি। কারণ, মিনারগুলো উঁচু হয়ে থাকে। বজ্রপাতের আগে, বজ্রপাতের সময় এবং বজ্রপাতের পরে সতর্কতামূলক বিষয়গুলো বেশি বেশি প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বজ্রপাতের সময় থার্টি বাই থার্টি বিধি অনুসরণ করতে হবে। বজ্রপাতের সময় আলোর বিচ্ছুরণ দেখামাত্র গণনা শুরু করতে হবে। এভাবে ৩০ পর্যন্ত গণনার সময়ে যদি শব্দ শোনা যায়, তাহলে মনে করতে হবে বজ্রঝড় অতি নিকটে। এ সময় অন্তত ৩০ মিনিট ঘরে অবস্থান করতে হবে। সময়োপযোগীয় প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে এবং তা সহজলভ্য করার পদক্ষেপ নিতে হবে।