সম্পাদকীয়

অস্থির জনপ্রশাসন-সমাধান জরুরি

জনপ্রশাসন একটি রাষ্ট্রের মেরুদ-স্বরূপ। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে-বাংলাদেশের জনপ্রশাসন বর্তমানে চরম অস্থিরতা ও সমন্বয়হীনতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধুই একাধিক দাবিতে ক্ষুব্ধ কর্মচারীদের আন্দোলনের চিত্র নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে গঠনতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব। সচিবালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলন, ক্যাডার বৈষম্য, মহার্ঘ্য ভাতার দাবিসহ নানান দাবি-দাওয়ার মধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে প্রশাসনিক অচলাবস্থা। বিশেষ করে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ ঘিরে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফলেই এই অস্থিরতা। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বর্তমান কর্মকর্তাদের দূরত্ব, এবং তা থেকে সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো-যেমন একজন নারী উপসচিবকে লাঞ্ছনার অভিযোগ, আদেশ গোপন রেখে ওয়েবসাইটে না দেওয়া, এবং আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষার মতো গুরুতর অভিযোগ-এই সংকটকে আরও গভীরতর করেছে। সরকারি সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা না থাকলে জনসেবা ব্যাহত হয়, এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পেছনে একাধিক ভুল পদক্ষেপ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাব পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে বা বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে যে চিঠিপত্র ইস্যু হয়েছে, তা প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতার নজিরমাত্র নয়, বরং এটি প্রশাসনের সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদালতের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া শুধু অনুচিতই নয়, এটি আইনের শাসনের ওপর আঘাতও। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা নয়, প্রয়োজন প্রশাসনের অভ্যন্তরে কার্যকর নেতৃত্ব, উন্মুক্ত সংলাপ, এবং সর্বোপরি জবাবদিহিতামূলক সংস্কৃতি। প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে একটি সুসংবদ্ধ সমন্বয় না থাকলে, কেবল শীর্ষপদে পরিবর্তন এনে বা কাউকে বদলি করে সমস্যার সমাধান হবে না। জনপ্রশাসনকে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত আনুগত্যের কেন্দ্র নয়, বরং রাষ্ট্রীয় কর্মক্ষমতা ও নাগরিক সেবার মূল ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সকল পক্ষের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে এগোনোই এখন সময়ের দাবি। নয়তো প্রশাসনিক এই হযবরল পরিস্থিতি আরও দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রীয় দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button