সম্পাদকীয়

সীমান্তে পরিচয়হীনদের উপস্থিতি: মানবিকতা ও জাতীয় নিরাপত্তার পরীক্ষায় বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে পরিচয়হীন মানসিক প্রতিবন্ধীদের ঘুরে বেড়ানোর যে চিত্র উঠে এসেছে, তা শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়-জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেও গভীর উদ্বেগের বিষয়। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও পর্যবেক্ষণে যে আশঙ্কা উঠে এসেছে-ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের ‘পুশইন’ করছে-তা যদি সত্য হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারতের বিশাল সীমান্ত, এবং তেঁতুলিয়া উপজেলায় চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর থাকায় এ এলাকা ভৌগোলিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অথচ এই সীমান্তেই যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচয়হীন, দুর্বল ও মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রবেশ ঘটতে থাকে, তবে তা শুধু স্থানীয় জনগণের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নও এনে দেয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এসব ব্যক্তির আচরণ, ভাষা ও চেহারা দেখে স্পষ্টতই মনে হচ্ছে তারা বাংলাদেশি নন। তারা কোথাও স্থায়ীভাবে থাকে না-দু-একদিনের মধ্যে একদল চলে যায়, আবার নতুন কেউ আসে। স্থানীয় মানুষজন সহানুভূতির জায়গা থেকে খাবার দিলেও, পরিবেশবিদ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মত অনুযায়ী, তারা নানা রোগজীবাণুর বাহক হয়ে উঠতে পারেন। একদিকে সীমান্তের শৈথিল্য, অন্যদিকে এমন ‘পুশইন’ কৌশলের ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুটোই হুমকির মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের করণীয় অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রথমত, এই ধরনের অনুপ্রবেশ কীভাবে ঘটছে-তা নিরূপণে বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আরও সক্রিয় হতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা ইতোমধ্যেই প্রবেশ করেছে, তাদের মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসার পাশাপাশি যথাযথ পরিচয় যাচাই ও কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কঠোর বার্তা দিতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে অবহিত করা দরকার, যাতে সীমান্তের এমন অমানবিক ও অব্যবস্থাপূর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিবাদ ওঠে। মানবিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ একে অপরের পরিপূরক; একটির বলি দিয়ে অন্যটিকে রক্ষা সম্ভব নয়। তেঁতুলিয়ার এই সংকট নিছক স্থানীয় কোনো সমস্যা নয়। এটি বৃহত্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রতিচ্ছবি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button