সম্পাদকীয়

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ-উন্নয়ন কি কাগজে সীমাবদ্ধ?

উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার ব্যবধান যে কতটা নির্মম হতে পারে, তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাজিরাপাড়ায় ঝিনাই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও কাজ শেষ হয়নি, বরং সাত মাস আগে নির্মাণকাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পালিয়ে গেছে। ফলে দুই উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের হাজারো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। শিক্ষার্থী, রোগী, লাশ-সবকিছুই পারাপার হচ্ছে নৌকায় কিংবা অনেকটা ঘুরপথে। ২০১৫ সালের দিকে নদীর পানির ¯্রােতে পুরনো ব্রিজটি ধ্বংস হয়। পরে ২০২০ সালে প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। কাজ শুরু হয় হায়দার কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড মো. লিয়াকত আলী জেবি নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালেও তা হয়নি। নির্মাণ অগ্রগতি মাত্র ৬০ শতাংশ। স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ ও ইউএনও স্বীকার করছেন, কাজ থেমে আছে। আর ঠিকাদার পক্ষ বলছে, ‘ব্যাংকিং জটিলতায় কাজ করা যাচ্ছে না’-এ এক অদ্ভুত যুক্তি, যেখানে জনগণের অর্থে চলছে প্রকল্প। এই ঘটনায় কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। একটি প্রকল্পে পাঁচ বছর ধরে কাজ অসমাপ্ত থাকলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার জবাবদিহি কোথায়? নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন কার্যকর তদারকি বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং সমস্যায় পড়লেও সরকার বা এলজিইডি কেন তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প পদক্ষেপ নেয়নি? এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ রকম বহু প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোর নির্মাণ মাঝপথে থেমে গেছে বা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এর ফলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট হলেও শাস্তির নজির প্রায় নেই বললেই চলে। জনগণের করের অর্থে পরিচালিত এসব প্রকল্পে গাফিলতির দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতায় উন্নয়ন থেমে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে বারবারই এমন দুর্ভোগে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে। আবার নতুন করে টেন্ডার করে প্রকল্প শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ইউএনও জানিয়েছেন-এতে নতুন করে সময় ও অর্থ ব্যয় হবে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। সরকার যদি সত্যিই ‘উন্নয়নবান্ধব’ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে চায়, তবে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের গুণগত মান, সময়সীমা ও অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কেবল বাজেট ঘোষণায় বা উদ্বোধনী ফলকে নয়-এর সুফল পৌঁছাতে হবে নদীর দুই পাড়ের সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button