জেব্রা ক্রসিং ও সিগন্যাল লাইট: সচেতনতার ঘাটতিই প্রধান বাধা

রাজধানী ঢাকায় পথচারী নিরাপত্তা ও ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনতে যে প্রয়াস শুরু হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সড়ক ও বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে জেব্রা ক্রসিংয়ে অটোমেটিক সিগন্যাল লাইট স্থাপন তারই বাস্তব রূপ। এই আধুনিক ব্যবস্থা পথচারীদের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে, যেখানে পুশ বাটনে চাপ দিয়ে সবুজ বাতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটি যেমন পথচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তেমনি যানজট হ্রাসেও কার্যকর ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রাখে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এ প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে নাগরিক সচেতনতা এখনো যথেষ্ট নয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ পথচারী এবং অনেক চালকই এই সিগন্যাল মানছেন না। কেউ পুশ বাটন না চাপেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন, আবার লাল বাতি জ্বলা অবস্থায়ও যানবাহন অনায়াসে চলাচল করছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠে, কেবল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দিয়ে কি কাক্সিক্ষত সামাজিক শৃঙ্খলা আনা সম্ভব? এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম এবং কঠোর আইন প্রয়োগ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তা শুধু কাগজে থাকলে চলবে না; তা মাঠপর্যায়ে প্রয়োগযোগ্য হতে হবে। লাল বাতিতে রাস্তা পার হওয়া কিংবা যান চলাচল-উভয়ের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কেউ এই নিয়ম অমান্য করতে সাহস না পায়। এছাড়া, প্রচার-প্রচারণা এবং শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিয়ম মানার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধু পথচারী নয়, চালকদের ট্রাফিক নিয়ম শেখানোর জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণ ও জরিমানার বিধান আরও কঠোর হওয়া দরকার। সর্বোপরি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা সফল হতে পারে একমাত্র তখনই, যখন নগরবাসী একে ব্যক্তিগত দায় হিসেবে নেবে। জেব্রা ক্রসিং মানা শুধু আইন নয়, এটি একজন নাগরিকের সভ্যতা ও নিরাপত্তাবোধেরও প্রতিফলন। তাই রাজধানীর প্রতিটি নাগরিকেরই দায়িত্ব এ ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে তা অনুসরণ করা, যাতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার এই প্রয়াস ব্যর্থ না হয়।