ডেঙ্গুর লাগাম টানতে এখনই চাই সমন্বিত উদ্যোগ

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে এলে এডিস মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। তবে চলতি বছরের পরিস্থিতি যেন আরও বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। বুধবার পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮৮ জন, যা ২০২৫ সালে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড। এর মধ্যে ২৬১ জনই বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা, যা অঞ্চলভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের ১১ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫,৩০৩ জনে। এর মধ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, তা-ও আশ^স্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ নেই। কারণ, পূর্ববর্তী বছরের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছর এখনো পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও মৃত্যুহার এবং আঞ্চলিক বৈষম্য ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ঘটেছিল ১,৭০৫ জনের-যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই বাস্তবতা থেকে শিক্ষা না নিলে চলতি বছরও আমরা একই পরিণতির আশঙ্কায় থাকব। বরিশাল বিভাগে সংক্রমণের মাত্রা বিপজ্জনক হারে বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-কেন এত বেশি রোগী সেখানে? স্থানীয় সরকারের কার্যকরী ভূমিকার অভাব, নগর পরিকল্পনায় ত্রুটি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, জনসচেতনতায় ঘাটতি এবং সময়মতো কীটনাশক প্রয়োগ না করাই এর পেছনের মূল কারণ হতে পারে। বরিশালের পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া উদ্যোগ তখনই কার্যকর হয়, যখন তা স্থানীয়ভাবে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এখন প্রয়োজন সার্বিকভাবে দ্রুত, সমন্বিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ। শুধুমাত্র আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে নয়, বরং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগোতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দরকার ঘরে ঘরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, নিয়মিত মশক নিধন কর্মসূচি এবং স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এই মুহূর্তে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে পরবর্তী মাসগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা চাই না, প্রতি বছর ডেঙ্গু যেন নিয়মিত মহামারিতে পরিণত হোক। তাই এখনই সময়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের।