সম্পাদকীয়

পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক: উন্নয়নের কাজ যেন ভোগান্তির অপর নাম না হয়

জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প মানেই জনস্বার্থে নেওয়া বৃহৎ পরিকল্পনা। এসব প্রকল্প সময়মতো এবং সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হলে যেমন অর্থনৈতিক প্রবাহ জোরদার হয়, তেমনি নাগরিক জীবনের মানোন্নয়ন ঘটে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ছয় লেন সড়ক প্রকল্পটি যেন বর্তমানে ঠিক তার বিপরীত এক চিত্রই উপস্থাপন করছে। নির্মাণকাজের ধীরগতি শুধু জনদুর্ভোগই বাড়াচ্ছে না, শিল্পখাতের গতি থমকে দিচ্ছে-যা দেশের অর্থনীতির জন্যও এক অশনিসংকেত। নারায়ণগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী ও আশপাশের এলাকায় প্রায় চার লাখ শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। তাদের অধিকাংশকেই প্রতিদিন এই দুর্ভোগময় সড়ক দিয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে কাদা-পানি আর খানাখন্দে ভরা সড়কে চলাফেরা করতে গিয়ে অনেক সময় তারা আহত হন, যানবাহন বিকল হয় কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হন। শুধু তাই নয়, এই অব্যবস্থাপনার প্রভাব পড়ছে শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানিতে। সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করতে না পারার ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে, বেতন-বোনাস পরিশোধেও তৈরি হচ্ছে জটিলতা। প্রকল্প পরিচালকের মতে, কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ এবং নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুন নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পুরো সড়ক যেন এক-একটি মৃত্যু ফাঁদ। অথচ এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করে হাজার হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক, বাস, অটোরিকশা ও শ্রমজীবী মানুষ। এখানে প্রশ্ন উঠছে, কেন এই প্রকল্পের গতি এত ধীর? ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত কেন বিষয়টি আরও দ্রুততার সঙ্গে নজরে আনছে না? প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা জনসমক্ষে তুলে ধরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত। পাশাপাশি, চলমান কাজের মধ্যেও যেন মানুষের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়, সে দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এটা ঠিক, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্পে সাময়িক ভোগান্তি একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সেই ভোগান্তি যদি সীমাহীন হয়ে ওঠে এবং জনজীবন ও উৎপাদন কার্যক্রমকে স্থবির করে দেয়, তাহলে সেটি আর উন্নয়ন থাকে না, রূপ নেয় অব্যবস্থাপনায়। সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত হয়তো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত সময়টুকুতে জনগণের ভোগান্তি লাঘব করাও উন্নয়নের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। উন্নয়ন প্রকল্পের সফলতা শুধু অবকাঠামো নির্মাণে নয়-মানুষের জীবনযাত্রায় তা কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলল, সেটিই আসল মানদ-।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button