সম্পাদকীয়

করোনায় দুই মৃত্যু: প্রয়োজন আগাম সতর্কতা ও দায়িত্বশীল আচরণ

কোভিড-১৯ মহামারির ভয়াল দিনগুলো পেছনে ফেলে বিশ^ আজ অনেকটাই স্বস্তিতে থাকলেও, ভাইরাসটির নতুন রূপ ও পুনরুত্থান একবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশেও করোনার অস্তিত্ব আবারও জানান দিচ্ছে। সর্বশেষ ১৩ জুনের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ জন। মৃত্যুর এই সংখ্যা যদিও তুলনামূলকভাবে কম, তবুও এর গুরুত্ব উপেক্ষা করার নয়-বিশেষ করে যখন জানা যাচ্ছে, দেশে অমিক্রনের দুটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। মারা যাওয়া দুই জনের মধ্যে একজন তরুণী, যিনি ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী; অপরজন ষাটোর্ধ্ব। তাদের মধ্যে একজন রাজধানী ঢাকায়, অপরজন চট্টগ্রাম বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর পেছনে বয়স বা কোমর্বিডিটি যেমন একটি ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি গুরুত্ব পায় চিকিৎসা সেবা এবং সময়মতো শনাক্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ। এই মৃত্যু শুধু সংখ্যা নয়, এটি একটি বার্তা-করোনার ছায়া এখনো সমাজে বিরাজমান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন করোনায় মারা গেলেও, শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। পরীক্ষার সংখ্যাও অত্যন্ত সীমিত-মাত্র ১৭৪টি নমুনায় এই শনাক্ত। এতে সহজেই বোঝা যায়, প্রকৃত সংক্রমণের চিত্র আরো বড় এবং জটিল হতে পারে। বিশেষ করে যখন দেশের ছয়টি বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় একটি নমুনাও পরীক্ষা হয়নি, তখন প্রশ্ন ওঠে: আমরা কি যথেষ্ট সতর্ক? এমন সময়ে আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোই সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। অথচ জনসাধারণের মাঝে সতর্কতা নেই বললেই চলে। মাস্ক পরা প্রায় উঠেই গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সামাজিক দূরত্বের চর্চা এখন যেন অতীত স্মৃতি। জনসমাগমপূর্ণ স্থানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, কোভিড নিয়ে কোনো আলোচনা বা প্রচারও নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহ দিয়েছে এবং হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুতের কথা বলেছে। এটি প্রশংসনীয়, তবে প্রশ্ন হলো-এই প্রস্তুতি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে? শুধুমাত্র নির্দেশনা দিলেই চলবে না, বাস্তবায়ন এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়নি। এটি বারবার রূপ পাল্টে ফিরে আসতে পারে। তাই আমাদের প্রতিরোধব্যবস্থাও হতে হবে স্থায়ী, সচেতন এবং গতিশীল। স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ, পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং যোগাযোগমূলক সচেতনতামূলক কার্যক্রম-এই তিনটি জায়গায় জোর না দিলে সামনে আবারও বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। করোনা আমাদের শিখিয়েছে, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে ছোট সংকটও ভয়াবহ বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তাই আমাদের উচিত, এই আগাম সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকা। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কোনো একক সংস্থার দায়িত্ব নয়-এটি রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিক সবার সম্মিলিত দায়িত্ব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button