সম্পাদকীয়

ফেরত আনার পাশাপাশি পাচার বন্ধ করা জরুরি

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়

বিগত সরকার পতনের পর অর্থ পাচারের ভয়াবহ চিত্র ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বছরে (২০২৪) সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড় জমেছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্র্যাংকে, স্থানীয় মুদ্রায় যা ৮ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যা ছিল ২৬৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। অবশ্য সুইস ব্যাংক তার কোনো আমানতকারীর তথ্য প্রকাশ করে না বলে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে কারা সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন, সে তথ্য প্রতিবেদনে নেই। এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এ তথ্য থেকেই বোঝা যায়, বিগত সরকারের আমলে চামচা পুঁজিবাদ কীভাবে অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টেও উঠে এসেছে কীভাবে অলিগার্করা নীতি প্রণয়নকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো অর্থনৈতিক কাঠামো। ওই সময়ে দেশের সম্পদশালীরা এ দেশকে নিরাপদ মনে করেনি বলেই তারা বিদেশে সম্পদ পাচার করে সাম্রাজ্য গড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার যখন বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন সুইস ব্যাংকের এমন তথ্য যে খুবই উদ্বেগের, তা বলাই বাহুল্য। সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, ওই সময়টায় দেশে সুশাসনের অভাব এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করায় টাকা পাচারের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ যে দুর্নীতি, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ঋণ খেলাপ করাও এক ধরনের দুর্নীতি। পরিতাপের বিষয়, লুটপাটের মাধ্যম হিসাবে এ দুটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল অর্থ পাচারকারীরা। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা তাই জরুরি। এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি দুর্নীতি রোধেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। দুর্নীতি রোধ করা গেলে অর্থ পাচার ও ঋণখেলাপির প্রবণতাও কমবে। অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করতে হবে। কীভাবে, কোন কোন চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেই ফাঁকগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে খেলাপি ঋণ আদায় এবং অর্থ পাচার রোধে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button