ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন জরুরি সমন্বিত উদ্যোগ

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর বর্তমান চিত্র উদ্বেগজনক। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের দুইটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ছয়টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১২৪ জন। একই সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনজন। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২,৪৮৬ জনে পৌঁছেছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩২৪ জন। মৃতের সংখ্যা সাতজন, যার মধ্যে পাঁচজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩৫৪ জন-যা এই জেলাকে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শুধুমাত্র ২৪ ঘণ্টাতেই বরগুনায় শনাক্ত হয়েছেন ৬৭ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বাড়লেও এবার বর্ষা শুরুর আগেই আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে-অসচেতনতা, মশার প্রজনন ক্ষেত্র নির্মূল না করা, এবং জনসাধারণের পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডলের মতে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে। অনেক রোগী বেসরকারি ক্লিনিক বা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যার তথ্য অফিসিয়াল পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করাই প্রতিরোধের মূল কৌশল। এটি সরকারের একক দায়িত্ব নয়, বরং জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এই মহামারি ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রতিটি বাড়ি, অফিস, নির্মাণাধীন ভবন এবং জনসমাগমস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। গণসচেতনতা গড়ে তুলতে মিডিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। সরকারিভাবে হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি, জনগণকেও উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মশানিধন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা। ডেঙ্গু একটি মৌসুমী রোগ হলেও এর ভয়াবহতা রোধে এখন প্রয়োজন মৌসুমভিত্তিক নয়, বরং বছরব্যাপী প্রস্তুতি ও মনোযোগ। দেরি না করে এই মুহূর্তেই কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে আরও প্রাণহানি না ঘটে।