সম্পাদকীয়

ডেঙ্গুর পূর্বাভাস ছিল, প্রস্তুতি কোথায়?

ঢাকা নগরীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি জরিপ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিল-ঢাকার অন্তত ১৩টি ওয়ার্ড এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেই তথ্য প্রকাশে চার মাসের বিলম্ব এবং সে অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা উদ্বেগজনক। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত পীরেরবাগ, কালশী, টোলারবাগ, মেরাদিয়া, রামপুরা, বাসাবো, লালবাগ ও পোস্তগোলার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবুও এলাকাগুলোতে মশক নিধন কর্মসূচি বা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম তেমন দেখা যায়নি। ফলাফল, জুনের মাঝামাঝি এসে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চলতি মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি। আর এ বছর এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। পরিস্থিতির আরও আশঙ্কাজনক দিক হলো-বিগত সরকারগুলোর সময় যেখানে প্রতিবছর তিন দফা এডিস জরিপ পরিচালিত হতো, সেখানে বর্তমান মেয়াদে মাত্র একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছে। প্রশ্ন জাগে, জনস্বাস্থ্যের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কেন এই গাফিলতি? পরিকল্পনার অভাব, সমন্বয়ের ঘাটতি না কি কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতা-এসব প্রশ্নের জবাব দায় নিয়েই দিতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে। আমরা ভুলে যেতে পারি না, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, ডেঙ্গু এখন মৌসুমি নয়, বরং সারাবছর চলমান রোগে পরিণত হয়েছে। তাই ডেঙ্গু মোকাবিলায় ‘‘মৌসুম এলেই অভিযান’’ নামক প্রতিক্রিয়াশীল পদ্ধতি যথেষ্ট নয়। লাগাতার জরিপ, তথ্য বিশ্লেষণ ও অভিযানে নজরদারি বাড়াতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে মাঠপর্যায়ে। এছাড়াও নাগরিকদেরও নিজের দায়িত্ব আছে। বাসা-বাড়িতে জমে থাকা পানি, ফুলদানি, টব বা ছাদে পড়ে থাকা ডাবের খোল-সবকিছুই এডিস মশার প্রজননস্থল হতে পারে। তাই নাগরিক সচেতনতা ও প্রশাসনিক তৎপরতার সমন্বয়েই কেবল সম্ভব ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধ করা। প্রশ্ন এখন একটাই-প্রাক্-ডেঙ্গু সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও কতটা প্রস্তুত রাজধানী? প্রতিক্রিয়া নয়, এবার প্রয়োজন প্রকৃত প্রস্তুতি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button