মব সন্ত্রাস চলছেই কঠোরভাবে দমন করতে হবে

দেশে মব সন্ত্রাসের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে দেশে অন্তত ১৩১ জন মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজনের (বাবা-ছেলে) ওপর মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে এবং সারা দেশে তা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। দুর্বৃত্তরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে, যা সমাজে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, মব সন্ত্রাসকে জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে এর ইন্ধনদাতা ও নেতৃত্বদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর অবশ্য বলছেন, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, মব জাস্টিস বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার সমর্থনযোগ্য নয়। আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে কিভাবে আসামিরা হেনস্তা হন, সে বিষয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাবেক সিইসির ওপর হামলার ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। ৩০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাঁরা মব সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। মব সন্ত্রাস একটি গুরুতর সামাজিক ব্যাধি, যা শুধু ব্যক্তিজীবনকেই নয়, সমগ্র সমাজব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। অপরাধীদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট মব সন্ত্রাস বন্ধে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা এই সহিংসতা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।