সম্পাদকীয়

যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন

আস্থার সংকটে পুঁজিবাজার

দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের অব্যবস্থাপনা, অনিশ্চয়তা এবং আস্থার সংকটে নিমজ্জিত দেশের পুঁজিবাজার। একসময় লাখো বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে অংশ নিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজার থেকে আস্থা হারিয়ে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী পিছু হটেছেন। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, যেখানে একসময় সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ, তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ লাখে। এটি দেশের শেয়ারবাজার পরিস্থিতির গভীর সংকেত বহন করে। একসময় বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে বাজার, আজও তা একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও বিনিয়োগকারীদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। পুঁজিবাজারের এই পতনশীল অবস্থার পেছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। আস্থার অভাব একটি প্রধান কারণ। আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাময়িক উত্থান হলেও তা ধরে রাখা যায়নি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও বাজারের সংকট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে ২০২৫’ অনুযায়ী, প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বর্তমান বিএসইসির নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতা প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য কারণের মধ্যে ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার অন্যতম। যখন ভালো ব্যাংকগুলো ১১ শতাংশের ওপরে সুদ দিচ্ছে এবং ট্রেজারি রেট রেকর্ড উচ্চতায়, তখন বিনিয়োগকারীরা স্বভাবতই পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মার্জিন ঋণের বিপরীতে শেয়ার বিক্রি (ফোর্সড সেল) এবং শেয়ার কারসাজিও বাজারের পতনকে ত্বরান্বিত করছে। যদিও নতুন বিএসইসি কারসাজিকারকদের জরিমানা করার মতো কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বাজারের গভীর সংকট নিরসনে যথেষ্ট নয়। জরিপে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক খাতের সংকটও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে। এর অর্থ হলো, পুঁজিবাজারের সংকট কেবল তার নিজস্ব দুর্বলতার ফল নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতিফলন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বের বদল নয়, বরং পুঁজিবাজারের কাঠামোগত সংস্কার, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্পষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ এবং বাজার কারসাজি বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট নিরসন এবং সুদের হার স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আবারও পুঁজিবাজারে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সুশাসন ছাড়া পুঁজিবাজারের এই দশা থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button