সম্পাদকীয়

গ্যাস সংকট সমাধানে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে

গ্যাস সংকটের কারণে ভুগছে দেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প। ঝুঁকিতে পড়ছে রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। পাশাপাশি, মার্কিন শুল্কনীতি বিশ^বাণিজ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা। রিজার্ভেও গ্যাস ৮ টিসিএফ-এর নিচে, টিকে থাকার লড়াই করছে শিল্পকারখানা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের গ্যাস পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য ছিল সামান্যই, যা নীতিনির্ধারকদের তেমন দৃষ্টিগোচরও হয়নি। পরের বছর এই ঘাটতি বাড়তে বাড়তে পৌঁছায় দিনে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে (এমএমসিএফডি)। তখনও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিন্তু বর্তমান চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বর্তমানে গ্যাস ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দিনে ১,১০০ এমএমসিএফডি-র বেশি, যা মোট চাহিদার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অর্থনীতি যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে গ্যাসের চাহিদা; বিপরীতে সরবরাহ কমেছে, কারণ বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলো দ্রুত নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে এবং এ ঘাটতি মেটাতে নতুন কোনো বড় মজুদের আবিষ্কার-ও নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৯৭২ বিলিয়ন ঘনফুট। ওই বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের। সাত বছর পর, রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে, কিন্তু গ্যাস উৎপাদন নেমে এসেছে ৭৪৭ বিলিয়ন ঘনফুটে। তাই অংকও মেলে না। অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া যায় না যদি জ্বালানির ভিত্তি সংকুচিত হয়। একইসঙ্গে গ্যাসের দামও আপনি বাড়াতে পারেন না যখন শিল্পকারখানাগুলো পাইপলাইনে গ্যাসের প্রেশার না থাকায় সীমিত সেই গ্যাসও পাচ্ছে না। ফলে এটি আর কেবল জ্বালানি নিরাপত্তার ইস্যু নয় এখন এটি শিল্প টিকে থাকার প্রশ্ন। গ্যাস না থাকলে কীভাবে চলবে বাংলাদেশের উৎপাদন খাত? ২০২৩ সালে সরকার গ্যাসের দাম এক লাফে ১৭৯ শতাংশ বাড়ায়, চলতি বছর আবার বাড়ায় ৩৩ শতাংশ। উদ্দেশ্য ছিল বাজারে স্থিতিশীলতা আনা। কিন্তু কাক্সিক্ষত সেই স্থিতিশীলতা এখনও অধরা। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যন্ত্রপাতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সময়মতো অর্ডার ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না। এই সংকটের শেষ কোথায়ু তাও অনিশ্চিত। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা ও বৈশি^ক মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে এই খাতটি সবেমাত্র ফিরতে শুরু করেছিল। এখন ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে আবার অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতা ও টাকার মান কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। দুই বছর আগে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। এখন তা ১২২ টাকা। এর ফলে তুলা ও যন্ত্রপাতি আমদানিকারকরা চাপে আছেন। অনেকে কার্যকরী মূলধন পাচ্ছেন না। শিল্পখাতকে বাঁচাতে হলে সরকারকে অবিলম্বে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন শিল্পে গ্যাস সরবরাহ যথেষ্ট হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button