সম্পাদকীয়

গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

গৃহকর্মীরা প্রতিদিন আমাদের ঘরের কাজ করে দেন। বাড়ি পরিষ্কার, রান্না, বাচ্চা সামলানো, বৃদ্ধের দেখাশোনা ইত্যাদি। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত হয় সম্মানজনক বেতন, সামাজিক নিরাপত্তা, কাজের সুনির্দিষ্ট শর্ত এবং আইনি সুরক্ষা থেকে। গণমাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনের খবর পাই। পত্রিকার পৃষ্ঠা মেললে প্রায় দিনই আমরা দেখি গৃহকর্মীদের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর। এই নির্যাতনের সিংহভাগ ক্ষেত্রে দায়ী থাকেন গৃহকর্তা বা তার কোনো আত্মীয়। এমনকি ছেলেশিশুরাও এদের বিকৃত লালসার হাত থেকে রেহাই পায় না। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যাপারে পরিবার থেকেও মদদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গৃহকর্মীদের ৯০ শতাংশ নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যায়। ১০ শতাংশ ধর্ষণের শিকার হয়। ‘অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট’ (এএসডি) পরিচালিত ‘সিচুয়েশন অব চাইল্ড ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক জরিপ ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে করা হয়, যা চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই জরিপমতে আইনের সহায়তা নেয় না গৃহশ্রমিক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস-বিলস-এর গবেষণা বলে ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী নির্যাতনের পর কারো কাছে অভিযোগ করে না। তাদের কাছে এগুলো ‘নিয়মিত ঘটনা’। শিশু গৃহকর্মীদের ন্যূনতম শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র এবং সান্ধ্য স্কুল চালু করা উচিত। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ উদ্যোগ সমন্বিতভাবে পরিচালিত হতে পারে। গৃহকর্মীদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার ও এনজিওদের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ গৃহকর্মীর জন্য কোনো ধরনের কর্মঘণ্টা নির্ধারিত নেই। পরিবারের সকলে ঘুম থেকে ওঠার আগে এই গ্রহশ্রমিকদের উঠতে হয় এবং তাঁরা ঘুমাতে যান সবাই ঘুমানোর পর। শ্রম আইন অনুযায়ী আট ঘণ্টা কাজ করার নিয়মের বালাই নেই তাঁদের জন্য। নেই কোনো ন্যূনতম বেতনকাঠামো। প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যাতে তিনি পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান। গৃহকর্মীর ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গৃহকর্মী সবেতনে ছুটি ভোগ করতে পারবেন। সন্তানসম্ভবা গৃহকর্মীকে তার প্রসূতিকালীন ছুটি হিসেবে মোট ১৬ সপ্তাহ সবেতনে মাতৃত্ব ছুটি দিতে হবে। গৃহকর্মীদের কাজের সময়, ছুটি, বিশ্রাম এবং ন্যায্য মজুরি নির্ধারণে বাধ্যতামূলক বিধান থাকতে হবে। কাজের সময়সীমা ৮ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং ওভারটাইমের নির্দিষ্ট নিয়ম প্রবর্তন করতে হবে। তাই শিগগিরই গৃহকর্মী সুরক্ষা এ কল্যাণনীতি আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। হয়তো তাতেও থামবে না নিপীড়ন; তবু কিছুটা আস্থার জায়গাও তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button