বেহাল লেক ভিউ সড়ক: প্রশাসনিক দ্বন্দ্বে জনদুর্ভোগ

রাজধানী ঢাকার অন্যতম সম্ভাবনাময় বিকল্প পথ-গুলশান লেক ভিউ (বাড্ডা-গুদারাঘাট) সড়ক-দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে আছে। চার বছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা কেবল ভোগান্তি বাড়াচ্ছে না, বরং নগর পরিকল্পনায় কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার চিত্রও তুলে ধরছে। প্রথমে রাজউকের অধীন এই সড়কটি নগরবাসীর স্বস্তি বয়ে এনেছিল। ২০১৮ সালে চালু হওয়ার পর যানজট এড়াতে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার অনেক যাত্রী এ পথ বেছে নেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সড়কটি যেন অচল এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কোথাও বিটুমিন উঠে গেছে, কোথাও গর্ত, কোথাও রাস্তা দেবে গেছে-চিত্র যেন একটি বিধ্বস্ত এলাকার স্মৃতি। দুঃখজনক হলেও সত্য, সড়কের এই করুণ পরিণতির পেছনে রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে বছরের পর বছর চলা দ্বন্দ্ব। রাজউক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে-এই প্রশ্নে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তার ফলই ভোগ করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। যদিও ২০২৩ সালের জুনে দায়িত্ব হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়, তবুও প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ডিএনসিসির ভাষ্যমতে, কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়-চার বছর সময় কি শুধু দায়িত্ব হস্তান্তরের অপেক্ষায় চলে গেল? রাজধানীর মতো একটি শহরে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বছরের পর বছর সংস্কারহীন থাকবে, এটি কল্পনাতীত হওয়া উচিত। নগর ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা, সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং জনসেবার প্রতিশ্রুতি-এই তিনটি বিষয় জরুরি। লেক ভিউ সড়কের অবস্থা তার প্রতিটি বিপরীত দিক তুলে ধরেছে। সড়কটির পাশে ওয়াসার পানি পাম্প, এসটিএস ময়লার কেন্দ্র, গ্যারেজসহ নানা স্থাপনা থাকলেও তদারকি নেই। বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে, গর্তে গাড়ি আটকে পড়ে, গ্যারেজের সামনে পানি দাঁড়িয়ে থাকে দিনের পর দিন। অথচ মাঝে মাঝে নামমাত্র ইট-সুরকি ফেলে দায়সারা মেরামতের চেষ্টা যেন লজ্জা ঢাকার ব্যর্থ প্রয়াস। নগরবাসীর করের টাকায় পরিচালিত সংস্থাগুলো যখন দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে, তখন জনগণের আস্থা ভেঙে পড়ে। এই সড়কটি কেবল গুলশান বা বাড্ডাবাসীর নয়, বরং গোটা শহরের একটি কৌশলগত বিকল্প পথ। সেটিকে রক্ষা করা ও চলাচলের উপযোগী রাখা নগর কর্তৃপক্ষের নৈতিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব। ডিএনসিসি প্রশাসকের ভাষ্য অনুযায়ী, শিগগিরই কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এ ধরনের অঙ্গীকার কতবারই না শোনা গেছে! এবার যেন তা শুধুই কথার ফানুস হয়ে না পড়ে থাকে। অবিলম্বে সংস্কারকাজ শুরু করে দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করাই এখন সময়ের দাবি।