সম্পাদকীয়

অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন

শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য

শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে। বিনিয়োগে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ফলে একদিকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে কাজ হারিয়ে বেকার হচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। কেবল বস্ত্র খাতেই গত আট মাসে ২৬ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতার পাশাপাশি এই স্থবিরতার বড় কারণ ঋণের উচ্চ সুদহার। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতেও ধস নেমেছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে রপ্তানিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলেও সর্বশেষ জুন মাসে দেশের রপ্তানি কমেছে ৭ শতাংশ। পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। একের পর এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁদের মতে, এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁদের ৬০০ কারখানা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তাঁরা ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা কমপক্ষে ছয় মাস করার দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি খরচ, সুতার লাগামহীন দাম, আমদানিনির্ভরতা, নীতি সহায়তার অভাব, প্রণোদনা কমানো ও মূল্য সংযোজনের অভাবে রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাত লোকসানের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিযোগিতা ও নীতিগত বৈষম্যের ফলে ভারত ও চীনের তুলনায়ও অনেক কম ভর্তুকি দেওয়া হয় এখানে। এ ছাড়া ব্যবসাবান্ধব নীতিগত সহায়তাও পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তারা বলছেন, ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের মতো দেশ যেখানে সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে ভারত থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুতা আমদানি হওয়ায় দেশীয় টেক্সটাইল মিলগুলো লোকসানে পড়ছে। বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কর্মসংস্থানের সেই চাহিদা যেখানে দ্রুত মেটানো প্রয়োজন, সেখানে ঘটছে উল্টোটা। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিদ্যমান কলকারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের গতি কমছে। অর্থনীতির এই পতন ঠেকাতে হবে। আর এ জন্য শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে, অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button