জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯: আস্থার সীমানা ছুঁয়ে যাওয়া এক অর্জন

১০ দিনে সাড়ে ১৫ হাজার সেবা
ঈদুল আজহার মতো দীর্ঘ ছুটির সময়ে যখন দেশের অধিকাংশ সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে বা সীমিত পরিসরে কাজ করে, তখন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ঠিকই নিরলসভাবে কাজ করে গেছে মানুষের পাশে। ৫ থেকে ১৩ জুন, টানা ১০ দিনের ছুটিতে ৯৯৯ থেকে সেবা পেয়েছে ১৫ হাজার ৬১৯ জন। এই সংখ্যাটিই প্রমাণ করে দেশের মানুষের বিপদের সময় প্রথম যে নামটি মাথায় আসে, তা হলো-৯৯৯। ঈদের সময় যেসব অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়, যেমন চাঁদাবাজি, অপহরণ, পশু হাটে অনিয়ম বা শব্দদূষণ, সেসব বিষয়ে নজরদারি এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জন্য ৯৯৯ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। এ সময় ৪ হাজার ১০২ জন মারামারির ঘটনায়, ১ হাজার ২১৪ জন অবরুদ্ধ থাকার অভিযোগে, এবং ৯৯২ জন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে সেবা পান। পশুর হাট ও চলাচলের পথ ঘিরে চাঁদাবাজি, প্রতারণা বা অজ্ঞান-মলম পার্টির হাত থেকে বাঁচতে ১ হাজার ২৭১ জন পেয়েছেন জরুরি সহায়তা। এটি বোঝায়, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ৯৯৯ কেবল সজাগই নয়, বরং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতাও অর্জন করেছে। দুইটি অপহরণ উদ্ধার অভিযানের মতো জটিল ও সংবেদনশীল ঘটনার সফল সমাধান-একটি টাঙ্গাইলে এবং অপরটি নারায়ণগঞ্জে-৯৯৯-এর তাৎক্ষণিক সমন্বয় ও পুলিশের সক্রিয় অংশগ্রহণের উদাহরণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির সদ্ব্যবহার এবং আন্তঃথানা সমন্বয় প্রমাণ করে, ৯৯৯ কেবল একটি কল সেন্টার নয়, এটি একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় কাঠামো যা বিপদের মুহূর্তে মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করার পর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ৯৯৯-এ এসেছে ৬ কোটিরও বেশি কল। যার মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৭৬ লাখ কলের বিপরীতে সরাসরি সেবা প্রদান করা হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, এর চেয়েও বেশি অর্থাৎ ৩ কোটি ৫৪ লাখ কল অপ্রয়োজনীয় বা বিরক্তিকর ছিল। এ ধরনের কল কেবল সময় নষ্টই করে না, বরং প্রকৃত বিপদে থাকা ব্যক্তির জন্য সেবা পেতে বিলম্ব ঘটায়, যা কখনো কখনো মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ৯৯৯ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় কলকারীদের নম্বর সাময়িকভাবে ব্লক করে দেওয়া এবং জরিমানার বিধান রাখা যুক্তিসংগত ও প্রয়োজনীয়। তবে এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করাও জরুরি-এই সেবাটি কোনো কৌতুক বা পরীক্ষা করার বিষয় নয়, এটি জীবন রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য নির্ভরযোগ্য অবলম্বন। সার্বিকভাবে বলা যায়, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এখন শুধু একটি হেল্পলাইন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক। প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ জনবল এবং সমন্বিত প্রশাসনিক উদ্যোগের কারণে ৯৯৯ আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা শুধু রক্ষণশীল নয়, বরং গর্ব করার মতো। এই সেবার গুণগত মান ধরে রাখতে হলে শুধু প্রশাসনিক নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাও জরুরি-যেখানে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ হবে এর সাফল্যের চালিকাশক্তি।