সম্পাদকীয়

স্লুইস গেট প্রকল্পে ধীরগতি: গলাচিপা শহরের নাগরিক জীবনে দুর্ভোগের দীর্ঘ ছায়া

উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নাগরিক জীবনের মানোন্নয়ন, স্থানীয় অর্থনীতির গতি সঞ্চালন এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা। কিন্তু পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌর শহরে স্লুইস গেট নির্মাণ প্রকল্প যেন সেই প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র উপস্থাপন করছে। প্রকল্পের নামে চলমান দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থাপনা শহরবাসীর জন্য রূপ নিয়েছে এক স্থায়ী দুর্ভোগে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি ঐতিহ্যবাহী গলাচিপা বন্দর খাল পুনরুজ্জীবন এবং দুই পাশে ওয়াকওয়ে ও স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্দেশ্যে হাতে নেওয়া হয়। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের জুনে। কিন্তু প্রকল্প শুরুর পরপরই পৌর শহরের প্রধান ও সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কটি কেটে ফেলা হয়-যা আজও অপরিচর্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দেড় বছরেও কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ অতিক্রম করেনি। এত দীর্ঘ সময় সড়কটি কাটা থাকায় শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম, লঞ্চঘাট বা ট্রলার থেকে মালামাল আনতে ঘুরপথে যেতে হয়, এতে খরচ ও সময় দুই-ই বাড়ছে। ক্রেতারা দোকানে আসছেন না, ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে-উন্নয়ন কি নাগরিক জীবনের মান উন্নত করছে, না জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে? শত বছরের স্থাপনা ভেঙে ফেলার পর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে রাস্তাটি বছরের পর বছর অব্যবহৃত রাখার পেছনে কি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা নয়? উপ-সহকারী প্রকৌশলী দাবি করছেন, স্ট্রাকচারাল কাজের ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অথচ বাস্তব চিত্র বলছে, এখনো রাস্তাটি আগের মতো কাটা এবং এলোমেলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর আশ^াস-‘দ্রুতগতিতে কাজ চলছে’-এখন অনেকের কাছেই কেবল আশ^াসই মনে হচ্ছে, বাস্তবতা নয়। যদি কোনো প্রকল্প নাগরিকদের জীবনযাত্রা স্থবির করে তোলে, ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ হয়, এবং নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ না হয়, তবে সেই প্রকল্প কতটা কার্যকর-তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একান্ত যুক্তিসঙ্গত। প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু টেন্ডার দেওয়া নয়, বরং তা সঠিকভাবে তদারকি করাও কর্তব্য। আমরা আশা করি, গলাচিপার জনগণের দীর্ঘ দিনের কষ্টকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উন্নয়ন যেন জনগণের দুর্ভোগের কারণ না হয়, সেটিই হওয়া উচিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতার প্রথম শর্ত।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button