সম্পাদকীয়

চাঁন মিয়া রোড: অবহেলার কাদায় নিমজ্জিত একটি শহুরে জীবনরেখা

চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ-বহদ্দারহাট থেকে খতিবের হাট, চাঁন মিয়া রোড হয়ে অনন্যা আবাসিক পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। অথচ এর বর্তমান চিত্র দেখে মনে হয়, এটি যেন নগরের কোনো প্রান্তিক গ্রামীণ পথ-ময়লা, কাদা, গর্ত আর জলাবদ্ধতার এক করুণ চিত্রপট। নগরবাসী বিশেষ করে শিক্ষার্থী, রোগী ও কর্মজীবীরা এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যে দুর্ভোগ পাড়ি দেন, তা একটি আধুনিক নগরের প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশের একাধিক এলাকার সাধারণ মানুষ। শহরের মাঝখানে থাকা এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের অপেক্ষায় আছে-যা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলতার ঘাটতি এবং নাগরিক সেবার প্রতি উদাসীনতা তুলে ধরে। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজের মতো স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দৈনিক শত শত রোগী যাতায়াত করেন। এদের অনেকেই শিশু, বৃদ্ধ, অথবা অন্তঃসত্ত্বা নারী। কাদাপানির ওপর দিয়ে, ময়লার স্তূপ আর খালের কাদা পার হয়ে যে রকম একটি যাত্রা, তা কোনোভাবেই মানবিক, স্বাস্থ্যসম্মত বা নিরাপদ নয়। অভিযোগ রয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ এখনো চলমান থাকায় এই সড়কের উন্নয়ন শুরু করা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-একই প্রকল্পের আড়ালে কত বছর ধরে একটি জনবহুল এলাকায় চরম ভোগান্তি চলবে? যদি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করতেই হয়, তবে অন্তত অস্থায়ী সংস্কার বা কাদামাটি অপসারণের মতো জরুরি ব্যবস্থা কি নেওয়া যায় না? উন্নয়নের নামে এমন দুর্ভোগ হলে সেটি উন্নয়ন না হয়ে উল্টো নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের সামিল। শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য বা ‘নজর আছে’ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাঁন মিয়া রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পথকে বছরের পর বছর অবহেলায় ফেলে রাখা যায় না। এটি কেবল একটি রাস্তাই নয়, এটি হাজারো মানুষের শিক্ষাগমন, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনচর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাস্তাটি একদিকে যেমন নাগরিক চলাচলের মূলধারা, অন্যদিকে নগর প্রশাসনের সক্ষমতার মানদ-। চসিকের উচিত অবিলম্বে অন্তত চলাচল উপযোগী করার জন্য প্রাথমিক সংস্কার, বর্জ্য অপসারণ এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় অস্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের পেছনে অপেক্ষারত মানুষদের দুর্ভোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। এই রাস্তা যেন আর অবহেলার প্রতীক না হয়, বরং হোক নগর পরিকল্পনার দায়িত্বশীলতার এক নতুন উদাহরণ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button