সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি কমেছে, কিন্তু স্বস্তি এখনও দূরে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি জুন মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৯.০৫ শতাংশ। পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ ৭.৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে। পরিসংখ্যানগতভাবে এ সংবাদের পেছনে কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত থাকলেও বাস্তবতা বলছে, সাধারণ মানুষের জীবনে এই ‘স্বস্তি’র প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান নয়। মূল্যস্ফীতির নি¤œগতি নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সঙ্কেত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই কমতির হার খুবই সামান্য এবং তা এখনও উচ্চমাত্রার মধ্যেই রয়েছে। বিশেষ করে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৯ শতাংশের ওপরে। শহরে ও গ্রামাঞ্চলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম এখনও বাড়তি, যার প্রভাব পড়ছে মধ্য ও নি¤œবিত্তের জীবনযাত্রায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান এক ধরনের মৌসুমি প্রভাব বা সাময়িক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলেও প্রকৃত স্বস্তি আসবে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে। আমদানি নির্ভরতা, জ্বালানি মূল্য, ডলারের বিনিময় হার, এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা-এসবই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। সরকার গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্য নিলেও তা অর্জিত হয়নি; বরং গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.০৩ শতাংশে-যা লক্ষ্যচ্যুত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। এছাড়া খুচরা বাজারের বাস্তবতা পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক ভিন্ন। চাল, ডাল, তেল, মসলা, সবজি কিংবা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে মূল্য কমার অনুভূতি সৃষ্টি না হলে শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের উন্নতি দিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা কঠিন। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের উচিত, মূল্যস্ফীতির কারণসমূহের গভীরে গিয়ে কার্যকর ও টেকসই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া। কৃষি ও শিল্পখাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি ও ডলারের বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জ্বালানি নীতিতে ভারসাম্য আনা এবং বাজার তদারকিতে প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। অর্থনীতি কেবল সংখ্যা দিয়ে নয়, মানুষের জীবনযাত্রার মান দিয়ে মাপা হয়। মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও তার সুফল মানুষ কখন পাচ্ছে-প্রশ্নটা এখন সেটাই। তাই কাগজে কলমে নয়, বাস্তব জীবনে মূল্যস্ফীতি কমেছে-এই উপলব্ধিই হওয়া উচিত সরকারের প্রধান সাফল্যের মাপকাঠি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button