সম্পাদকীয়

বিবিয়ানায় ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত: টেকসই সমাধান বের করুন

ফুরিয়ে যাচ্ছে বিবিয়ানার গ্যাস ফিল্ডের মজুদ, কমে আসছে উৎপাদন। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন করা হচ্ছে বিবিয়ানা থেকে। হঠাৎ করেই বড় ধরনের ছন্দপতন হতে পারে, তেমন পরিস্থিতি হলে সামাল দেওয়ার মতো বিকল্প নেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাতে। নতুন অনুসন্ধান কূপগুলোতে গ্যাস না পাওয়া গেলে সামনে ভয়াবহ সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মজুদ বিবেচনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড বলা হয় বিবিয়ানাকে। পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত গ্যাস ফিল্ডটিতে প্রমাণিত, সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে ৭০৮৪ বিসিএফ (৭.০৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ ধারণা করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের মালিকানাধীন ওই ফিল্ডের প্রমাণিত মজুদ ৪৪৪৫ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) আর সম্ভাব্য মজুদ বিবেচনা করা হয় ৫৭৫৫ বিসিএফ। চলতি বছরের গত ৩০ জুন পেট্রোবাংলা দেশের খনিগুলো থেকে মোট ১ হাজার ৮৩৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিবিয়ানা একাই সরবরাহ করেছে ৯২৭ মিলিয়ন ঘনফুট, যা মোট সরবরাহের ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ খনিটি এখনও দেশের গ্যাস সরবরাহের প্রধান ভরসা। হঠাৎ করে এর উৎপাদন কমে এলে সারা দেশে গ্যাস সংকট দেখা দিতে পারে। হাইড্রোকার্বন ইউনিটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিবিয়ানায় প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩২১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫৩১ বিসিএফ এরই মধ্যে উত্তোলন হয়ে গেছে। ফলে অবশিষ্ট মজুত রয়েছে মাত্র ৭৮৯ দশমিক ৭ বিসিএফ। এই খনি থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খনিটি দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক জোগান দিয়ে এসেছে। কিন্তু খনিতে অফুরন্ত গ্যাস নেই-প্রতিটি কূপের আয়ু নির্দিষ্ট। বর্তমানে বিবিয়ানার ২৬টি কূপের মধ্যে ১১টি থেকে নিয়মিত গ্যাস তোলা হচ্ছে। কিছু কূপে গ্যাস চাপ কমে আসায় সেখানে কমেপ্রসার বসিয়ে উত্তোলন চলছে। বছর পাঁচেক আগেও এই খনি থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হতো। এখন তা কমে ৯২৭ মিলিয়ন ঘনফুটে এসে ঠেকেছে। দু-এক বছরের মধ্যে আরও বড় পরিসরে উৎপাদন হ্রাস পাবে। এলএনজি আমদানি করেও চাহিদা মেটানো কঠিন হবে। কারণ আমাদের আমদানি সক্ষমতা এখনও ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে। বাপেক্সের সক্ষমতা সীমিত, তাই হয়ত তৃতীয় পক্ষকে কাজে লাগাতে হবে।’সরকারের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বাস্তবে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। গ্যাস আমদানি করে সাময়িক ঘাটতি মেটানো গেলেও দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। তাই দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিই একমাত্র টেকসই সমাধান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button