দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ জরুরি

প্রতিবছর বন্যা
প্রতিবছরের মতো এবারও বহু মানুষ বন্যায় আটকে পড়েছেন। টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের ফলে ফেনী জেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরবর্তী বাঁধের অন্তত ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এর ফলে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের আশায় পাড়ি দেন, অনেকেই তাঁদের গবাদিপশুসহ ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনায় সংকট রয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত স্থান সংকট প্রকট। বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে যাওয়ায় অল্প কিছু এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে, সেনাবাহিনী বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে। উপকূলীয় ও পাহাড়ি আরও কিছু অঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং সড়ক বিচ্ছিন্নতার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যেমন, নোয়াখালীর কিছু উপজেলা, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি, খাগড়াছড়ির কয়েকটি ইউনিয়ন, রাঙামাটির লংদু এবং বরিশালের নানা এলাকা এখন দুর্ভোগে আছে। দেখা যাচ্ছে, দেশের অনেক অঞ্চলের মানুষ এখন বিপদগ্রস্ত। ফেনীর কথাই আগে বলা যাক। সেখানকার বাঁধগুলো যে ভেঙে গেল, এর কারণ নিশ্চয়ই এগুলোর নির্মাণ ঠিকমতো না হওয়া। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি যে হয়েছে, তা বোঝাই যায়। অথচ শক্তপোক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হলে মানুষ রক্ষা পেত বন্যার কবল থেকে। পানির তোড়ে যেন কোনো বাঁধ ভেঙে না যায়, সেভাবেই নির্মাণ করতে হবে বাঁধ। বর্তমানে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলোর পুনর্নির্মাণও জরুরি। দেশের যেসব অঞ্চলে ভারী বর্ষণ কিংবা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যার কবলে পড়েছে মানুষ, সেসব অঞ্চলের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে অবশ্যই। শুধু ত্রাণসামগ্রী দিয়ে অসহায় মানুষের প্রাণ বাঁচালেই চলবে না, বন্যার কারণে রাস্তাঘাটসহ যেসব স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো মেরামত করতে হবে। পুনঃসংযোগ স্থাপন করতে হবে বিদ্যুতের। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের কাজও এগিয়ে নিতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। ভারী বর্ষণ প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়, একে ঠেকানো যায় না; কিন্তু বন্যা ঠেকানোর জন্য নির্মিত বাঁধ কেন ভেঙে যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা। খাবার ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত তদারকি ও দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমেই বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। যেহেতু প্রতিবছরই বাংলাদেশ বন্যাকবলিত হয়, সেহেতু দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই।