সম্পাদকীয়

দেশের শিল্পখাত মুখ থুবড়ে পড়ছে: ঘুরে দাঁড়াতে হবে

রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশের শিল্প খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গ্যাস, বিদ্যুৎ, মূলধন ও ডলার সংকট, কাঁচামালের অভাব, শ্রমিকসংকট এবং পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়াসহ একাধিক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে শিল্প উদ্যোক্তাদের। সরকারি পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতগুলোতে উল্লেখযোগ্য উৎপাদন কমেছে, বিশেষ করে সিমেন্ট, লাইম, প্লাস্টার, রড, স্টিল, ওষুধ, ওয়েভিং টেক্সটাইল, নিট ফেব্রিক্স, জুট টেক্সটাইল, কাগজ, সফট ড্রিংকস, চা ও কফি উৎপাদনে এই পতন দেখা গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা শিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শ্রমিক অসন্তোষ এবং মূলধন সংকটের কারণে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে দেখা দিয়েছে সংকট। রড ও সিমেন্ট শিল্পগুলোর উৎপাদনেও বিপর্যয় ঘটেছে, কারণ ভোক্তা চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে ডলার সংকট। কমছে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির হার। কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ধুঁকছে অনেক কারখানা। অনেক কারখানা নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। ফলে বাড়ছে শ্রম অসন্তোষ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অনুকূল নয়। সামগ্রিকভাবেই শিল্প খাতের পরিবেশের অবনতি হচ্ছে। এসব কারণে দেশীয় উদ্যোগ যেমন কমছে, তেমনি কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। ৩ হাজারের বেশি বৃহৎ শিল্প রয়েছে দেশে। মোট কর্মসংস্থানের ৬৮ শতাংশই উৎপাদনমুখী শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া কাঁচামালের ৬৩ শতাংশ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানির ৫৬ শতাংশই ব্যবহার করে রড-সিমেন্ট, বস্ত্র খাতের মতো বৃহৎ শিল্পগুলো। ফলে ডলারের উচ্চমূল্য এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এসব শিল্পের উৎপাদনে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ওপর বাজারে চাহিদা না থাকায় মিল মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন। এই পরিস্থিতি দেশের কর্মসংস্থানের প্রায় ৯৫ শতাংশ জোগান দেওয়া বেসরকারি খাতের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিনিয়োগ তলানিতে নেমে এসেছে, নতুন উদ্যোগ গ্রহণ বা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিতে ব্যবসায়ীরা দ্বিধাগ্রস্ত। দেশের অর্থনীতিকে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। জরুরি ভিত্তিতে শিল্প খাতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো দরকার। ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। সবসময় প্রত্যাশা থাকে দেশে শিল্প বাড়–ক, ছোট কোম্পানি থেকে মাঝারি, আবার মাঝারি কোম্পানিগুলো বড় কোম্পানি হয়ে উঠুক। কিন্তু অর্থনীতির আকারের সঙ্গে শিল্পের আকার সেভাবে বাড়েনি। এটি অর্থনীতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। সরকারকে নীতি কাঠামোগত সংস্কারও করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button