ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত মেরামত প্রয়োজন

সাগরে বিলীন হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের বাঁশবাড়িয়া সৈকত থেকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের উপকূলীয় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এ ছাড়া বাঁশবাড়িয়া থেকে কুমিরা ইউনিয়নের ৩ কিলোমিটার ব্লক বেড়িবাঁধের অন্তত ১৬ স্থানের ব্লক সরে গেছে। ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন স্লুইসগেটটিও; সেটি কোনোরকম বালুর বস্তা দিয়ে ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা। এমন পরিস্থিতিতে উপকূলবাসী আসন্ন বর্ষায় ভেঙে যাওয়া এসব অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ এবং বসতঘর ও ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে এই সংক্রান্ত যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা স্থানীয় মানুষের জন্য উদ্বেগজনক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পরিমাণ প্রায় ৫০০ মিটার এবং এর স্থায়ী সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই প্রকল্প এখনো অনুমোদিত হয়নি। অথচ বর্ষার পূর্বেই বাঁধ মেরামত না করা হলে স্থানীয় জনজীবন ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনবে। যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন না করার ফলে সাধারণ মানুষ অনেক সময় সরকারি প্রকল্প হতে কাক্সিক্ষত সুবিধা লাভ করতে পারে না। কেবল সীতাকু- নয়, সমগ্র বাংলাদেশেই বেড়িবাঁধের এই প্রকার ভঙ্গুর দশা এক সাধারণ চিত্র। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি হতে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু বেড়িবাঁধ জীর্ণদশার কারণে প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে পড়ছে, যাহার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ নিয়ে সীতাকু-বাসীর দুর্ভোগ অনেক দিনের। আগের বেড়িবাঁধটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় ২০ বছর তাদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে কাটাতে হয়েছিল। নতুন বেড়িবাঁধটি মাত্র পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি যে পরিকল্পনাহীনতা এবং দুর্নীতিপুষ্ট, সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বেড়িবাঁধে যে ব্লক বসানো হয়েছে, তা আকারে তুলনামূলক ছোট। এগুলো সাধারণত ঢেউ নেই, এমন নদী এলাকায় ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ব্লক বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের উপযোগী নয়। প্রশ্ন হলো, তৎকালীন পাউবো কর্তারা জেনেবুঝে কীভাবে এমন সর্বনাশা প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিলেন? যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এমতাবস্থায়, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। যেই সকল এলাকায় এইরূপ সমস্যা প্রকট, সেইখানে প্রয়োজনে নূতন বাঁধ নির্মাণেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বিলম্ব হলে একদিকে যেমন জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।