সম্পাদকীয়

বোতলজাত পানি কি আসলেই নিরাপদ? ভাবা দরকার

আমরা হোটেল-রেস্তোরাঁয়, অফিসে, বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে হরহামেশাই বোতলজাত পানি পান করি। অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, দোকান, প্রতিষ্ঠানে ক্রমেই উঠে যাচ্ছে কলের পানি দেওয়া ব্যবস্থা। খাবারের সঙ্গে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়ায় তারা কৌশলে বোতলজাত পানি দিয়ে দেয়। এ কথা সত্য, দেশের কিছু জায়গায় পানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর বাইরে দেশের সর্বত্র প্রাকৃতিক পানি পাওয়া যায়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক জায়গাতেই প্রাকৃতিক উৎসের পানি সহজলভ্য। সেসব স্থানে কেন প্লাস্টিকের বোতলজাত পানি আমরা ব্যবহার করছি? আগে উৎসব-অনুষ্ঠানে গ্লাসে পানি দেওয়া হতো, এখন সে জায়গায় দেওয়া হয় বোতলজাত পানি ও কোমল পানীয়। আমাদের ধারণা, বোতলবন্দি পানীয় মাত্রই নিরাপদ। তা কিন্তু নয়। প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পানি জীবাণুমুক্ত করা হলেও অনেক সময় সেই পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বোতল তৈরিতে ব্যবহার করার হয় পলিথিলিন টেরেফথ্যালেট, যা উচ্চ তাপমাত্রায় পানিতে মিশে তাকে করে তোলে বিষাক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তৈরি বোতলের পানি দীর্ঘদিন পান করলে শরীরে দেখা দিতে পারে ক্যানসারের জীবাণু। কিডনির সমস্যাসহ নানা সমস্যার আশঙ্কা থাকে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রায় ৯৩ শতাংশ প্লাস্টিক বোতলে রয়েছে ক্ষতিকর উপাদান। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের ফলে শরীরে প্রবেশ করতে পারে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক। ন্যানো প্লাস্টিক ইতোমধ্যে মানুষের রক্ত, মল ও ফুসফুস এমনকি প্লাসেন্টাতেও পাওয়া গেছে বলে জানান গবেষকেরা। তাদের মতে, বোতলের পিইটি প্লাস্টিক থেকেই কিছু কণিকা ছড়ায়। বিশেষ করে বারবার বোতলের ঢাকনা খোলা-বন্ধ করলে অথবা গাড়ির মত গরম পরিবেশে রাখলে। তবে বাকিগুলো কোথা থেকে আসে তা এখনো গবেষণাধীন। ধারণা করা হচ্ছে, পানির উৎস বা বোতলজাত করার প্রক্রিয়াতেও এসব কণিকা প্রবেশ করতে পারে। বোতলজাত পানি দেখতে যতই স্বচ্ছ বা ঠান্ডা হোক না কেন, এর ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই পানির গুণগত মান, পরিশোধন পদ্ধতি এবং প্যাকেজিং উপাদানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই জরুরি। সরকার, উৎপাদক এবং ভোক্তা সবার সম্মিলিত উদ্যোগেই নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা সম্ভব। আর একটি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনের শুরু হয় একটি নিরাপদ পানির গ্লাস দিয়েই। আমরা যদি প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য ও পানি গ্রহণ কমিয়ে দিই, প্রাকৃতিক কাপড় ও সামগ্রী ব্যবহার করি, তাহলে কিছুটা হলেও ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button