সম্পাদকীয়

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ নিন

রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। দেশে সড়কে আইন মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। সড়কজুড়ে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এদেশে ‘গণঅভ্যুত্থান’ ঘটেছে। সরকারের উদ্যোগে দেশে সংস্কার চলছে, সংবাদে সংস্কারের কথা চোখে পড়লেও বাস্তবতা ভিন্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সংস্কারের কোনো চিত্র এখনো চোখে পড়েনি। কোনো খাতেই শৃঙ্খলা ফিরছে না। অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না। বিগত সরকার বিশেষত সড়ক পথের উন্নয়ন দেশের সার্বিক চিত্রকে বদলে দিয়েছে। গহীন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পিচঢালা সড়ক। গ্রামের উঠোনে উটের গ্রীবার মতো গলা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সড়কের শৃঙ্খলা না থাকায় এবং দেখভালের সংকটে সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। প্রায় প্রতিদিনই পথে পথে মৃত্যুর মিছিল। গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ ঝরছে হরহামেশা। সারাদেশের সড়কে কোন গাড়ি সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক গতি আলাদা করা হয়নি। ফলে সড়কে এখনও ফেরেনি শৃঙ্খলা। খেয়াল-খুশিমতো চলছে গাড়ি, বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোতে এখন প্রধান সড়কগুলোতে পুরোনো ভাঙা বাস চলছে- যার বেশিরভাগই কালো ধোঁয়া ছাড়ছে। আগে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চললেও এখন কোনোকিছু তোয়াক্কা না করেই মূল সড়কে যাত্রী বহন করছে তারা। মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী তুলতে জটলা করছেন। বাসচালকরা আগের মতোই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রী তোলা ও নামিয়ে দেয়ার পরিবর্তে যখন তখন রাস্তার মাঝেই যাত্রী নামাচ্ছে ও উঠাচ্ছে। যানবাহনগুলোর গতিও বিপজ্জনক। অধিকাংশ চালক-আরোহী এমনকি পথচারীরাও ট্র্যাফিক আইন মানছেন না। রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কের মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা ধরে রাখতে হচ্ছে লাঠি-বাঁশি কিংবা হাত উঁচিয়ে। কোথাও আবার সিগন্যাল কার্যকর করতে সড়কের মুখে রশি টানিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখতে হচ্ছে। এরপরও ব্যারিকেড ভেঙে ছুটে চলছে একশ্রেণির চালক। সিগনালে অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য অনেকেরই থাকছে না। ট্র্যাফিক পুলিশকে অনেক সময় এ নিয়ে চালক ও আরোহীদের সঙ্গে বাগ্বিত-া করতে দেখা যাচ্ছে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঐকমত্য যেমন দরকার, তেমনিভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কাউকে লাগবে। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিয়ে কখনো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যান সড়ক থেকে সরাতে হলে চালকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগকে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button