সম্পাদকীয়

সাপের কামড়ে বাড়ছে মৃত্যু: স্বাস্থ্য খাতে সংকট দূর করতে হবে

সাড়া বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। আর বাংলাদেশে আছে ৯০ প্রজাতির সাপ। এসবের মধ্যে ৫ শতাংশ বিষধর। এগুলোর মধ্যে অন্যতম রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া, কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়, নায়া নায়া (কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ), কেউটে, ক্রেইট বা শঙ্খিনী ও নায়া কাউচিয়া। এর মধ্যে রাসেলস ভাইপার সবচেয়ে বিষাক্ত। এ সাপটি ১০০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবার এ সাপের দেখা মিলছে। বর্তমানে ২৭টি জেলায় এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দেশে অ্যান্টিভেনমের উৎপাদন না থাকায় শাপের কামড়ে যেমন মানুষের মৃত্যু বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যু আতঙ্ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে ৮১ হাজার থেকে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যান এবং আরো প্রায় চার লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গু হন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মৃত্যুহার সর্বাধিক। অথচ এই অঞ্চলেই একাধিক দেশ ইতোমধ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো ছয় প্রজাতির বিষধর সাপের বসবাস আমাদের চারপাশে। সেসব বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হন দেশের প্রায় সাড়ে ৯৬ হাজার মানুষ। যার মধ্যে মৃত্যু হয় বছরে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষের। আর এক দিনে সাপের কামড়ে মারা যায় গড়ে ২০ জন। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, দেরিতে হাসপাতালে যাওয়া, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকা এবং অ্যান্টিভেনম থাকলেও তা ব্যবহারে চিকিৎসকদের অনীহা, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অভাব এসব কারণে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে । এই পাঁচ মাসে সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন ৬১০ জন। সাপের ছোবলে আক্রান্তদের ২০ থেকে ২২ শতাংশের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো সমন্বিত চিকিৎসার অভাব এবং সময়ক্ষেপণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে না গিয়ে ওঝা বা বৈদ্যের শরণাপন্ন হন। আমাদের দেশে ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনমগুলো শত বছরের পুরোনো প্রযুক্তিতে তৈরি এবং দক্ষিণ ভারতের চার ধরনের সাপ থেকে সংগৃহীত বিষে তৈরি হওয়ায় সব ধরনের সাপের বিষের বিরুদ্ধে এটি কার্যকর নয়। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০ থেকে ২২ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষেধক তৈরি দেশের জন্য খুবই দরকারি উদ্যোগ। এটি চালিয়ে যাওয়া উচিত। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button