সম্পাদকীয়

জনগণের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে কার্যকর করতে হবে

তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে এই ইস্যু নতুন করে আলোচনায় এসেছে, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। এর আগে গত মার্চে তিস্তা নিয়ে এই নদী তরে দুইদিনব্যাপী ব্যাপক জনসমাবেশ থেকে দাবি উঠেছিল জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই। কিন্তু ভারতের এ নিয়ে কানে তুলা দেয়া আছে। তারা বাংলাদেশের মানুষের কোনো কথা, দাবি শোনে না। এটা আন্তর্জাতিক নদী আইন অমান্য করার অপরাধ ও অপরের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য এক ধরনের চাতুরী। তাই জনগণের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে কার্যকর করা এখন সময়ের দাবি। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ গত চার দশকে ১২০টি মিটিং করেও কোনো সমাধান হয়নি। বরং ভারত বার বার ছলনা করে সময় ক্ষেপণ করেছে। এ অবস্থায় আবারো শুধু মিটিং করে আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দরকষাকষি করা বোকামি নয় কি? তিস্তা পাড়ের মানুষ হতাশ হয়েছে বার বার। তাদের সাথে গোটা দেশের মানুষও হতাশ। তাদের হতাশা একেবারে যৌক্তিক। ১২০টিরও বেশি মিটিং, শত শত আলোচনা তবুও চুক্তি হয়নি। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশকে সময়ক্ষেপণের ফাঁদে ফেলে রাখার একটা কৌশল মাত্র। তিস্তা নদী এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা। তিস্তাকে ভারত বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের নামে ভারত আমাদের থেকে সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। এ বাংলায় তারা কানেকটিভিটিও স্থাপন করেছে। বিনিময়ে আমরা কি পেলাম। তাদের সঙ্গে এখনো আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েই গেল। তিস্তা আমাদের জন্য মহাবিপর্যয়। আমাদের কি হলো না হলো তা তোয়াক্কা না করে প্রতি বছর ইচ্ছেমতো পানি ছেড়ে দিচ্ছে আবার আটকে দিচ্ছে কিছুই কি বলার থাকছে না? অমন পরিস্থিতি আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি। শুষ্ক সিজনে খরায় মরুকরণ করে কৃষি কাজে বিঘœ সৃষ্টি করে আমার কৃষক ভাইকে দিন দিন নিষ্ফসলায় ফেলে দিচ্ছে। তিস্তা সুবিধাভোগী দুই কোটির বেশি লোক বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাস করে। তিস্তার ওপর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল রংপুর বিভাগের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা তিস্তা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী। তিস্তার প্লাবনভূমি ২ হাজার ৭৫০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তীর্ণ। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফসল বোরো ধান চাষের জন্য পানির প্রাথমিক উৎস এবং মোট ফসলি জমির প্রায় ১৫ শতাংশ সেচ প্রদান করে। ভারত বাংলাদেশকে তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না, যার সরাসরি ফলাফল হিসেবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠী হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশের কূটনীতিকদের লক্ষ্য হবে বিশ^ মিডিয়ায় তিস্তা ইস্যুকে প্রধান আলোচনা হিসেবে দাঁড় করানো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button