সম্পাদকীয়

এখনই টেনে তুলতে হবে

ডুবছে বেসরকারি খাত

গভীর সংকটের মুখে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা, ঋণপ্রবাহে ভাটা, এলসি খোলার হ্রাস, ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপির উচ্চহার এবং সুদের হার বৃদ্ধির ফলে গোটা অর্থনীতির চাকা ধীর হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতির এই সংকট কেবল সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোকে প্রভাবিত করছে না, বরং লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। একই সময়ে আমদানির ঋণপত্র খোলা ২৪.৪২ শতাংশ কমে ৪.১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২০ সালের আগস্টের পর সর্বনি¤œ। এই দুটি সূচকই শিল্পোৎপাদন, ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থান ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ জুন শেষে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৭.০৯ শতাংশ। মাত্র তিন মাসেই এক লাখ কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে থাকা ৯টি ব্যাংক এবং সালমান এফ রহমান ও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট এতটাই তীব্র যে তারা গ্রাহকের জমা টাকা তোলার চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে এবং ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের দুরবস্থাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে ২০২৩ সালে গড় সুদহার ৯ শতাংশ ছিল, তা ২০২৪ সালের এপ্রিলে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এই উচ্চ সুদহারের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন এবং তিন মাসের মধ্যেই খেলাপি তালিকায় নাম ওঠার ঝুঁকিতে পড়ছেন। এর ফলস্বরূপ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে পোশাক, সুতা ও জুতার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন বিনিয়োগের উদ্যোগ কমেছে এবং চালু থাকা অনেক কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরী যথার্থই বলেছেন যে বেসরকারি খাতের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে, নীতিগত সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ও স্বল্পসুদে ঋণপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করাই হবে এই মন্দা রোধে প্রধান করণীয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button