স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য বন্ধ হোক

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাত দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্খিত মানে পৌঁছাতে পারছে না। দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি নতুন নয়। ওষুধ সেবাধর্মী পণ্য হলেও বিক্রি বাড়াতে কোম্পানিগুলো নানা ধরনের কৌশল নিয়ে থাকে। তবে সব পন্থা যে নৈতিক নয়, তা বলাই বাহুল্য। চিকিৎসকদের প্রতিযোগিতা করে উপঢৌকন দিচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে নিজেদের তৈরি ওষুধ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য, বিদেশ সফর, নানা সামগ্রীসহ নগদ অর্থও দেওয়া হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ ডাক্তার নির্দিষ্ট কোম্পানির, এমনকি মানহীন ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধও লিখছেন। ফলে পকেট কাটা যাচ্ছে রোগীদের। শুধু বাড়তি অর্থ যে যাচ্ছে তাই নয়, এর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যও পড়ছে হুমকির মুখে। সব ডাক্তারই যে এটা করছেন তা নয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। এটা অবশ্যই ডাক্তারদের নীতি-নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কারণ, একজন রোগী বিপদে পড়ে বিশ্বাস নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। আর সেই বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা সভ্যসমাজে চলতে দেওয়া যায় না। কেননা অনৈতিক এই চর্চার কারণে রোগীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যয় বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে যেভাবে ওষুধের মার্কেটিং করা হয়, সেটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মেলে না। বিদেশে নতুন ওষুধ তৈরি হলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বাংলাদেশে রিপ্রেজেনটেটিভের মাধ্যমে সরাসরি বিজ্ঞাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিংয়ের কারণে ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ উৎপাদনের খরচ ৫০-৭০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে এর প্রভাব পড়ে ওষুধের দাম ও মানের ওপর। সাধারণত শীর্ষ কোম্পানিগুলোর চেয়ে অখ্যাত কোম্পানিগুলো বেশি কমিশন দিচ্ছে। এ কারণে গ্রামগঞ্জসহ সারা দেশে গ্রাম্য চিকিৎসক, ফার্মেসি কর্মী-দোকানদাররা নি¤œমানের ওষুধ বিক্রি করতে উৎসাহ দেখান। ফলে মানুষ দুইদিক দিয়ে ঠকছে। এক হচ্ছে বেশি টাকা খরচ, দুই মানহীন ওষুধ নিতে হচ্ছে। উৎপাদিত ওষুধ নিয়ে কোম্পানিগুলোর এমন অনৈতিক মার্কেটিং অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশ নিষিদ্ধ তো বটেই, এলাকার আশপাশেও যাতে তারা অবস্থান করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ডাক্তারের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির অবৈধ লেনদেনের ঘটনা প্রমাণিত হলে উভয়পক্ষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এমন অনৈতিক চর্চা অবশ্যই কাম্য নয়। স্বাস্থ্য খাতে এ অরাজকতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এখনি সময়।