রেলক্রসিং যেন এক-একটি মৃত্যুফাঁদ; রেলক্রসিং নিরাপদ করতে হবে

দেশের অধিকাংশ রেলক্রসিং মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত শনিবার কক্সবাজারের রামুতে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ধাক্কায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও চার যাত্রীসহ পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে; যা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। জানা গেছে, রামুর রশিদনগর থেকে ভারুয়াখালী যাওয়ার পথে কক্সবাজার শহরের বাইপাস সংলগ্ন স্থানে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা পার হওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে। সিএনজিটিকে এক কিলোমিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় পর্যটকবাহী ওই ট্রেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আরেকটি ট্রেন আটকিয়ে বিক্ষোভ করে। বাংলাদেশে রেললাইনে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বছরে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু কিংবা ট্রেনকেন্দ্রিক দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রেলক্রসিং ঘিরেই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। স্বভাবতই হতাহতের সংখ্যাও এ ক্রসিং কেন্দ্র করেই ঘটে, যার সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রায় ৮৩ শতাংশ মৃত্যুই রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার কারণে ঘটে। রেল পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে এ দুই কারণেই ৭৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রেলক্রসিং ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপারের চেষ্টা এবং রেললাইনের ওপর বসা বা চলাচলের কারণে গত এক দশকে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ৭ হাজার ৯৮ জন। আর বিভিন্ন কারণে গত ১০ বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ২৩৭ জনের। এর মধ্যে গত তিন বছরে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪০ জনে, অর্থাৎ এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত। আবার রেল দুর্ঘটনার প্রায় তিন-চতুর্থাংশের প্রাণ যাচ্ছে এসব রেলক্রসিংয়ে। রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে এমন একটা ধারণা জন্মেছে যে রেলক্রসিংয়ে যানবাহন চাপা পড়ে প্রাণহানির দায় তাদের নয়। কারণ, বেশির ভাগ সংস্থা সড়ক নির্মাণের সময় তাদের অনুমতি নেয়নি। কিন্তু ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, রেলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা ‘বৈধ’ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৬১.৫৮ শতাংশই অরক্ষিত। গত ছয় বছরে এ পরিস্থিতির খুব কি বেশি উন্নতি হয়েছে? সড়ক ও রেল-অবকাঠামো খাতের দুই যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে কতটা সমন্বয়হীনতা ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি গেড়ে বসেছে, রেলক্রসিংয়ে মৃত্যু তার প্রামাণ্য হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা যেহেতু রেলক্রসিং এবং রেলের ওপর চলাচল কেন্দ্র করে ঘটে, সুতরাং চাইলেই এটা এড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই দরকার সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজন সারা দেশের অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোকে সংরক্ষিত বা নিরাপদ করা। এ ক্ষেত্রে গেটম্যানসহ যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।