ভয়াল রূপে চাঁদাবাজি; আরও কঠোর হতে হবে

চাঁদাবাজি ভয়ংকর এক ব্যাধি, যা সমাজের নৈতিকতা, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তাকে চরমভাবে বিঘিœত করে। এটি শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্ষতির কারণ হয় না, বরং রাষ্ট্রীয় স্তরেও অরাজকতা, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার জন্ম দেয়। আজকের সমাজে চাঁদাবাজি যেন একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে, যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমান যুগে চাঁদাবাজি নানা রূপে বিস্তার লাভ করেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই চাঁদাবাজির করালগ্রাস বিরাজমান। যেমন ট্রান্সপোর্ট চাঁদা, দোকানপাট থেকে মাসিক চাঁদা, বিভিন্ন দলের নামে চাঁদা, পুলিশের নামে চাঁদা ইত্যাদি। ইসলাম এসব অনৈতিক কর্মকা-কে স্পষ্টভাবে হারাম ও অন্যায় বলেছে। এসব কর্মকা- সমাজে দুর্নীতি, দখলদারিত্ব, ভয়ভীতি এবং অসাম্য সৃষ্টি করে। পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার আলোচনা শেষ না হতেই রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় ঢ়ুকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জেলায়ও চলছে একই কৌশলে চাঁদাবাজি। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ার যে-সব খবর গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। ছাত্র সমন্বয়ক বলতে এখন কিছু নেই। যেটা ছিল, সেটা চলে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়েছে। এখন যারা সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, তারা সন্ত্রাসী। দেশে তারা অরাজকতা সৃষ্টি করছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘিœত করছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বিএনপির একশ্রেণীর বিপথগামী নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি নিয়ে সরব। অথচ সমন্বয়কদের নামে যে এন্তার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে, তা নিয়ে কোনো কথা বলছে না। এটা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, গুলশানে সমন্বয়ক নামধারীদের যে অপকর্ম প্রকাশিত হয়েছে, দেশব্যাপী সমন্বয়কদের বেশুমার অপকর্ম অচিরেই প্রকাশিত হবে। কিছু কিছু প্রকাশ হওয়া শুরু হয়েছে। ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে কোনো কিছুই এখন আর গোপন থাকে না। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের জাগরণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই অপরাধ সমাজের মূল ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়, মানুষকে করে নিরাপত্তাহীন, ক্ষুব্ধ ও হতাশ। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে, অপরাধী যেই হোক, যতই প্রভাবশালী হোক, কোনো ধরনের অনুকম্পা না দেখিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।