বৃষ্টি ও বন্যার সম্ভাবনায় প্রস্তুতির ঘাটতি যেন না থাকে

আগস্টের শুরুতেই সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তর, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ চলতি সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ একাধিক নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বিপদসীমা ছুঁয়ে যেতে পারে, এমনকি কোথাও কোথাও তা অতিক্রমও করতে পারে। এতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার মতো জেলা গুলোর নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন আগের চেয়ে অনিশ্চিত, তীব্র এবং ছন্দহীন। চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। আগস্ট মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকলেও অঞ্চলভেদে ভারি বর্ষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্তায় স্পষ্ট, বঙ্গোপসাগরে এখনই নি¤œচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা না থাকলেও, আগস্ট মাসে একটি মৌসুমি নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে-যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। অপরদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীর পানি বাড়তে থাকায় প্লাবনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় প্রশাসন এবং তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সমন্বিত প্রস্তুতি। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও ত্রাণ তৎপরতায় শ্লথ’তা কিংবা সমন্বয়হীনতা ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে এখনই পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে-বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, যমুনা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীবেষ্টিত এলাকাগুলোয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তথ্যের প্রবাহ ও সতর্কতা ব্যবস্থার জোরদারকরণ। জনসাধারণকে আগাম সতর্কবার্তা, স্থানচ্যুতির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের তথ্য অবহিত করতে হবে-যাতে সম্ভাব্য দুর্যোগের আগে জনগণ সুরক্ষিত অবস্থানে যেতে পারে। বৃষ্টি প্রকৃতির নিয়মমাফিক আশীর্বাদ হলেও, ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও উদাসীনতা সেটিকে দুর্ভোগে রূপ দিতে পারে। তাই এখন সময় সঠিক প্রস্তুতির, প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার।