সম্পাদকীয়

সড়ক কি কোনোদিন নিরাপদ হবে না?

প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা যেন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার খবরও যেন স্বাভাবিক। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে, আহত হচ্ছে, চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন গণমাধ্যমে খবর আসছে- তবু এদিকে যেন কারও কোনো দৃষ্টি নেই। সড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে পড়ছে মানুষ। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তির পরিবারে নেমে আসছে অন্ধকার। স্বজন হারানোর পাশাপাশি কর্মক্ষম সদস্যদের হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার। প্রশ্ন হলো, এভাবেই কি চলতে থাকবে? দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো কি নিরাপত্তাহীনই থেকে যাবে? এগুলোকে নিরাপদ করার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কারও অজানা নয়। চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্দশাগ্রস্ত সড়ক, বিশ্রামহীন গাড়ি চালনা-মূলত এগুলোই দুর্ঘটনার কারণ। এ জায়গাগুলোতে দৃষ্টি দিলে দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করি আমরা। দেশে সড়ক পরিবহণ আইন আছে। এ আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেই দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে অহরহ সড়ক পরিবহণ আইনের লঙ্ঘন হলেও অপরাধীর শাস্তি হয় কদাচিৎ। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে শিথিলতার সুযোগ নেই। আইনে ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ফাঁকফোকর থাকলে তা দূর করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, মহাসড়কগুলোয় যানবাহনের গতিসীমা বেঁধে দিতে হবে। কোনো যানবাহন এ গতিসীমা লঙ্ঘন করলে চালককে শাস্তি দিতে হবে। অনেক দেশেই রয়েছে এ ব্যবস্থা। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার যেহেতু অনেক বেশি, সেহেতু এখানেও এমন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তৃতীয়ত, ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে অনেক সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সড়কের সেসব স্থান চিহ্নিত করে ত্রুটিগুলো দূর করা জরুরি। নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে সরকারকে এসব বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার, পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা ও জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে; প্রতিদিনের মৃত্যুর মিছিল প্রতিনিয়ত ছোট হতে হতে একসময় থেমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button