সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে। কিন্তু নির্বাচনের পথে এখনো অনেক বাধা রয়েছে তা বলাই যায়। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক বছর পার হলেও প্রশাসনে এখনও এলোমেলো অবস্থা রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখনো ট্রমা কাটেনি। উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া অনেক অস্ত্র। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা চাচ্ছে না নির্বাচন হোক। এ ছাড়া দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়টির নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলে ভোটের হার কমে যাবে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। বিগত সরকারের সময় বিরোধী দল দমনে পুলিশের ব্যবহারের কারণে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ ছিল জনমনে। সরকারের পতনের পর অনেক জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা হয়। ফলে তাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। সরকার মনোবল ফেরাতে কাজ করলেও এখনো পুরো স্বাভাবিক হয়নি। অনেককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছেন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সরকার পতনের পর সচিবালয়েও ছিল অস্থিরতা। বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও ওঠে। আন্দোলনের মুখে শিক্ষা সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সরকার নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে ইতোমধ্যে বদলি করছে। তবে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, নির্বাচনের ঘোষণা ইতিবাচক হলেও মাঠের রাজনীতিতে নির্বাচন ঘিরে সংশয় এখনো কাটেনি বলেই । বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। বরাবরই দেখা যায়, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তত বেশি অবনতি হতে থাকে। এ বছর পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যও জোর প্রস্তুতি চলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোতে নতুন করে প্রায় ২০ হাজার জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এসব বাহিনীতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বভিত্তিক প্রশিক্ষণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করি, আগামী নির্বচন যেমন উৎসবমুখর হবে তেমনি শৃঙ্খল হবে।