কুয়াকাটার সৈকত: উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ

বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা তার অনন্য সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত ও বিস্তৃত বালুকাবেলার জন্য পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম এ সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা বিপন্ন করছে। ধসে পড়া মেরিন ড্রাইভ রক্ষার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈকতের বুক চিরে বালু উত্তোলন করছে, ফলে সৈকতে সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য গভীর গর্ত- যা পর্যটকদের জন্য মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ইতিমধ্যে এসব গর্তে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা রক্ষায় এই বালু প্রয়োজন। কিন্তু পরিবেশবিদদের মতে, এটি কোনো টেকসই সমাধান নয়; বরং এভাবে সৈকতের ইকো সিস্টেম ধ্বংস হচ্ছে। অতীতে বালুভর্তি জিও টিউবের বাঁধ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, অস্থায়ী অবকাঠামো প্রকৃতিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। মেরিন ড্রাইভের বাইরে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত রাস্তা ও তার রক্ষণাবেক্ষণের নামে এমন কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে আরও ভাঙন ডেকে আনতে পারে। কুয়াকাটা শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়; এটি একটি সংবেদনশীল উপকূলীয় অঞ্চল ও জাতীয় সম্পদ। উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে বলি দিলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও পরিবেশ- উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতিটি প্রকল্প শুরুর আগে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারের উদ্যোগ জরুরি। সরাসরি সৈকতের বালু তোলা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, এটি পর্যটন খাতের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণœ করছে। উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা হতে হবে পরিকল্পিত, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। প্রশাসনের উচিত জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনর্বাসন, গভীর গর্তগুলো দ্রুত ভরাট ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যথায় অস্থায়ী উন্নয়ন স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যার ভার বইতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। কুয়াকাটাকে রক্ষা করতে হলে এখনই দায়িত্বশীল ও বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে- যাতে সাগরকন্যা তার স্বাভাবিক ও নিরাপদ রূপে ফিরে আসতে পারে।