সম্পাদকীয়

দেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য হুমকি বাড়ছে

দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমছে বনভূমি। আমাদের ধানিজমির পরিমাণ কমছে। এসব জমি কমার পেছনে মূল কারণ আমরা জমি ধ্বংস করে ঘরবাড়ি বানাচ্ছি। জঙ্গল কমে গেছে, বন্যপ্রাণী চলাচলের জায়গা কমে যাচ্ছে। এটি জীববৈচিত্র্যির হুমকি স্বরূপ। ৮ বছরে কমেছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৫ সালে বন এলাকা ছিল ১৮ হাজার ৪৯৯ দশমিক শূন্য ৮ বর্গকিলোমিটার বা ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এলাকা। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৮ দশমিক ১৮ কিলোমিটারে বা ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আমাদের হাওরের জমি কমে যাচ্ছে। আমাদের সম্পদ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, আমরাই শেষ করে ফেলছি। জমির জিংক কমে যাচ্ছে, এটিও বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। ফলে অনেকের প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম হচ্ছে। আগে হাওড় এলাকায় প্রচুর খালি জমি ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। আমাদের চারপাশে অনেক পশুপাখি বসবাস করত। কিন্তু এখন তো জঙ্গল বলতে আর অবশিষ্ট নেই। দ্রুত নগরায়ণের ফলে আজ এমন অবস্থা। এভাবে কৃষি ও বনভূমি হ্রাস খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। দেশের মানুষের খাদ্যের জোগানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কৃষি উৎপাদন। কৃষিজমি কমলে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষিপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হবে। এমনিতেও দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন সেভাবে বাড়ছে না। কৃষিজমি হ্রাস, উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের অভাব, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং সে অনুপাতে কৃষক আয় করতে না পারাসহ নানা কারণে কৃষি উৎপাদনে নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ধানের আবাদ হয়েছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৫ লাখ হেক্টরে। আর সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবাদকৃত জমি ১ কোটি ১৪ লাখ হেক্টরে নেমে আসে। অর্থাৎ সর্বশেষ পাঁচ বছরে আবাদকৃত জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। এর বিপরীতে পাঁচ বছরে হেক্টরপ্রতি ফলন বেড়েছে কেবল ৪ শতাংশ। আর চাল উৎপাদন মাত্র ২ শতাংশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিজমি কমে আসা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্বেগ। গত আট বছরে বনভূমি কমেছে ৫.৪১ শতাংশ: একই সময়ে বনভূমির পরিমাণ ১৮ হাজার ৪৯৯ কিলোমিটার থেকে কমে ১৭ হাজার ৪৯৮ কি.মিতে নেমে এসেছে, যা মোট ভূমির ১২.৫৪ শতাংশ থেকে ১১.৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ আট বছরের ব্যবধানে বনভূমি কমেছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে ‘অন্যান্য বনভূমি’ কমেছে ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশে কৃত্রিম বনায়ন ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দেশে এখনো ভূমি ব্যবহার ও এর সুরক্ষা-সংক্রান্ত আইনের কার্যকর প্রয়োগ নেই। কৃষিজমি রক্ষায় সরকারকে সুনির্দিষ্ট আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের রাশ টেনে ধরতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button