বুড়িগঙ্গাকে বাঁচিয়ে ঢাকার পরিবেশ রক্ষা করুন

পৃথিবীর খুব কম শহরই আছে, যার চারদিকে নদী। সেদিক থেকে ঢাকা হতে পারত অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব শহর। এর চারদিকে রয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। এক সময় বুড়িগঙ্গাই ছিল ঢাকার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগের প্রধান পথ। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গা বাঁচলে ঢাকার আশেপাশের মানুষ বাঁচবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে। এক সময়ের ঢাকার জীবনখ্যাত বুড়িগঙ্গা দূষণের কারণে এখন প্রায় মৃত। নদী রক্ষার নানা আয়োজনের ঢাকঢোল পেটানোর মধ্যেও বুড়িগঙ্গা আবার বর্জ্যরে ভাগাড় ও দূষণরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে নদীর ভেতর ফেলা হচ্ছে পানি দূষণকারী ভয়ংকর সব বর্জ্য। নদীর দুই পাড় ঘেঁষে এখন শুধু আবর্জনার স্তূপ। কালো কুচকুচে পানি যেন বিষ। শিল্প-কারখানার বর্জ্য থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বর্জ্য, সবকিছুর শেষ ঠিকানা নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী বুড়িগঙ্গা। এভাবে নদীপাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় চারদিকের পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সদিচ্ছা থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের অনীহার কারণে কিছুতেই প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না বুড়িগঙ্গা। সেইসঙ্গে দুই পাড়ের মানুষ রয়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বুড়িগঙ্গা তিলে তিলে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এ নদীর জায়গা দখল করে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গড়ে উঠছে স্থাপনা। কমছে নদীর প্রশস্ততা, কমছে প্রাণপ্রবাহ। বুড়িগঙ্গার বড় অংশেই নেই জলজ প্রাণী বা মাছ। এ নদীর পানি বহু আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে। এমনকি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শ^াস নেওয়া যায় না। পানির দুর্গন্ধে আশপাশে টেকাই দায়। বুড়িগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুনার থেকে বসিলা হয়ে লালবাগ লোহারপুল পর্যন্ত আদি বুড়িগঙ্গা সম্পূর্ণরূপে দখল করে ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেসরকারি ও শিল্প কারখানার মত বৃহৎ প্রকল্প ও ব্যাপক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। শুধু আইন করে বুড়িগঙ্গা বা অন্যান্য নদী রক্ষা করা যাবে না। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে হতে হবে নদীর রক্ষাকর্তা। এখন কোনো রকমে বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে লঞ্চ চলাচল করছে। নদী দূষণ ও ভরাট প্রক্রিয়া চলতে থাকলে সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকা শহরকে জীবন্ত রাখতে, ঢাকার বাসিন্দাদের সুস্থ রাখতে যে কোনো মূল্যে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে।